পেশাদারিত্ব মানে সঠিক ব্যবহার, লক্ষ্য ও গুণাগুণ বজায় রেখে কাজ করা। কাজের প্রতি শ্রদ্ধা, সৎভাবে কাজ করার উদ্যম, দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা, সময় মতো কাজ শেষ করার প্রবণতা, হতাশ না হয়ে আশাবাদী থাকা এবং কর্মদক্ষতা থাকলে পেশাদারিত্ব আছে বলা যায়। কর্মক্ষেত্রে উন্নতি চাইলে পেশাদারিত্ব আবশ্যক, ডিসিপ্লিন থাকা জরুরি। পেশাদারিত্বের উপরে গুরুত্ব যত কম দেওয়া হয় উন্নতি তত কম হয়। যে যত বেশি পেশাদারী তার উন্নতি হয় তত তাড়াতাড়ি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান পেশাদার নয়, সেখানে ব্যক্তির পেশাদারিত্বও ব্যক্তিকে সামনে এগিয়ে দেবে না।
নিজের কাজটি ঠিকমতো করা
নিজের কাজটি সঠিকভাবে করে দেওয়াই দায়িত্ব পালন। কাজ ঠিকমতো করতে না পারলে বা সবার থেকে ভালো না পারলে বসের আপনার উপর ভরসা থাকবে না। দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি চাইলে অর্পিত দায়িত্ব সততার সাথে পালন করতে হবে। পেশাদার ব্যক্তি অপরকে অসম্মান করেন না, নিজের ও অন্যের কাজকে সম্মান করেন, পজিটিভ থাকায় অল্পতেই ভেঙে পড়েন না, ইতিবাচক মনোভাব রাখেন, কাজের প্রতি একঘেয়েমি বোধ করলে অন্য কাজ নিয়ে উদ্দীপ্ত থাকেন, কাজ পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করেন।
নিজের দোষ-গুণের দিকেও লক্ষ্য করা
ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রস্তুতি নিলে ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলো আগেভাগেই বিবেচনা করেন, বিভিন্ন কাজের সময় নির্ধারণ করে নেন, যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিদের সঠিক স্থানে বসিয়ে বিচক্ষণতার সাথে টিম গঠন করেন, ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করে যথাযথ প্রস্তুতি নেন। গ্রাহক-ক্রেতা-ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করার প্রয়োজনে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা, সুদৃষ্টি অর্জন করা, যথাযথভাবে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। পেশাদার ব্যক্তি শুধু অন্যের কাজ কিংবা দোষ-গুণ দেখেন না, নিজের দোষ-গুণের দিকেও লক্ষ্য করেন। ক্যারিয়ারে যেকোনো উপায়ে সফলতার চেষ্টার চেয়ে পেশাদারিত্বটা বজায় রাখা অনেক কঠিন। পেশাদারিত্ব না থাকলে পেশাজীবনটাই মিছে। কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব না থাকায় পিছিয়ে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত, ধাক্কা খেতে হয় পদে পদে।
কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা
পেশাদার হতে হলে প্রতিষ্ঠানের সব বিষয়ে শতভাগ সততা থাকতে হবে, নিজের কাজ ও প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাবের হতে হবে, প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে, সবার কাজের প্রতিই শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। নেটওয়ার্কিং এবং অনেক মানুষের সাথে যোগাযোগে পেশাদারি মনোভাব বজায় রাখলে নতুন চিন্তা, নতুন কর্মপন্থা, নতুন সুযোগ তৈরি হয়। নিষ্ঠাবান হওয়ার সাথে বাড়িয়ে নিতে হবে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আর জ্ঞানের পরিধি। কাজ সংশ্লিষ্ট পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ, বেশি বেশি কাজের সাথে যুক্ত হন। পেশাদাররা কাজের ধরনটা বুঝে উঠতে চান, কাজে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেন না, সহজ কিংবা খুব জটিল সব কাজকেই গুরুত্ব দেন, সব বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখান। পেশাদাররা নিজেরাই ঠিক করে নেন, কাজের প্রয়োজনে কি করতে হবে; শুধু অন্যেরটা দেখে শেখেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়াতেই পেশাদারির পরিচয়, কাজ অসমাপ্ত রেখে জটের সৃষ্টি করায় নয়।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখা
চিন্তা এবং কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বজায় রাখেন একজন পেশাদার। প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্যের ফলে কাজের সুযোগ আসে এবং কাজের সুযোগগুলোকে একাগ্রতার সাথে কাজে লাগালে পেশাদারিত্ব আসে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য ছাড়া পেশাদারিত্ব আসে না, কারণ প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ব্যক্তির দক্ষতার কোনই মূল্য নেই। প্রতিষ্ঠান চাকরি দিলেও কোনো ব্যক্তি যদি নিজ দায়িত্ব ভালোভাবে পালন না করে, পেশাদারিত্ব আসবে কোত্থেকে! পেশাদারিত্ব আসে নিজের কাজের প্রতি একাগ্রতার ফলে। প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যদি চাটুকারিতায় অভ্যস্থ না হয়, তবে তারা কাজে অগ্রগতি না হলে আনুগত্য দিয়ে দক্ষতা মাপেন না। নিজের কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়াটাই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য। বসকে বুঝে নিতে হয়, কাদেরকে তিনি গুরুত্বের সাথে সম্পৃক্ত করবেন এবং কাদেরকে তিনি গুরুত্বের সাথে কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন রাখবেন। যাদের সাথে সম্পৃক্ততা বা বিচ্ছিন্নতা উভয়ই বিপদজনক। তাদের জন্য একটি মাঝামাঝি অবস্থান আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখতে হয়।
প্রাণবন্ত উপস্থাপন
কঠোর পরিশ্রম করবে কিংবা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করবে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। কিন্তু পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অনেক বেশি কঠিন। পেশাদারিত্বের জন্য যে তিনটি ‘পি’ অনুসরণ করতে হবে; তা হলো- সময়ানুবর্তিতা (Punctuality), উপস্থাপনা (Presentation) এবং ঐকান্তিকতা (Perseverance) বা অধ্যাবসায়। সেভহীন মুখ, এলোমেলো চুল, অপরিচ্ছন্ন শার্ট, ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত থাকার কারণে চোখ লাল হয়ে থাকা- পেশাদার ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য নয়। আপনি ক্লান্ত থাকলেও ক্লায়েন্ট যেন বুঝতে পারে আপনি প্রস্তুত, প্রাণবন্ত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন-সুন্দর পোষাক পরিধান করেছেন। উপস্থাপনার মানে আপনাকে দেখতে কেমন লাগছে, কিভাবে আপনি কথা বলছেন এবং লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারছেন।
ঐকান্তিকতা দেখান, অভিযোগ করেন না
একজন পেশাদার তার সর্বোচ্চ কোয়ালিটি এবং ঐকান্তিকতা দেখান, কঠোর পরিশ্রমের পরও অভিযোগ করেন না, আরেক জনের ওপর দোষ চাপান না। একজন পেশাদার ব্যক্তি এমন নন, যে শুধু আসেন নির্দিষ্ট কিছু কাজ করবেন এবং সময় শেষ হলে চলে যাবেন। যেখানে পেশাদারিত্ব নেই, সেখানেই পেশাগত চরম দূর্দশা চলে। যেসব প্রতিষ্ঠান ঠিকমত বেতন-সম্মানী দিতে পারেন না তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে পেশাদারিত্ব আশা করার নৈতিক অবস্থান হারান। যেখানে পেশাদারিত্ব নেই, সেখানে আর্থিক নিরাপত্তা থাকে না। ফলে অনেকে ধান্ধাবাজীর আশ্রয় নেন, অনেকে অনৈতিক পথে যান। কখনো কখনো পেশাদারিত্বে থাকলেও সম্মান নাও মিলতে পারে, পেশাদারিত্ব থাকলেও সাফল্য নাও আসতে পারে। তবে মানসিক তৃপ্তি থাকে, বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থাকা যায়। পেশা আর নেশা যদি এক হয়ে যায় তার আলাদা গতিতো আছেই।
পেশাদারি মনোভাব বৃদ্ধি ও চর্চা
পেশাদারিত্বের অভাব সর্বত্র। ‘প্রফেশনালের অভাবে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। প্রফেশনালিজমের ক্রাইসিস রয়েছে বলেই আমরা যুগোপযোগী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে হিমসিম খাচ্ছি। এই জায়গাগুলোতে আমাদের কাজ করতে হবে। পেশাদারিত্বের অভাবেই জ্বালানি বিভাগ পিছিয়ে পড়ছে’- বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশ, আইনজীবী এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু এইসব পেশায় যুক্ত থাকা কিছু দুর্বুত্তের কারণে যদি এসব পেশার পেশাদারিত্ব নষ্ট হয় তাহলে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গত মার্চে চুয়াডাঙ্গায় এক চক্ষু শিবিরে ২০ জনের চোখ নষ্ট হওয়ার প্রেক্ষাপটে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট সোমবার এসব মন্তব্য করেন। মোশাররফ করিম বলেছেন- কাজে পেশাদারিত্ব থাকা উচিত। আর মিশা সওদাগর বলেছেন- চলচ্চিত্রে পেশাদারিত্বে অভাব রয়েছে। পেশাদার ফুটবল লিগে পেশাদারিত্ব মানছে কী ক্লাবগুলো? পেশাদার লিগে ফুটবলারদের পারিশ্রমিক প্রদান, নিজস্ব অনুশীলন মাঠ, জিমনেসিয়াম ও নিজস্ব ভেন্যু থাকতে হবে। অধিকাংশ ক্লাবই নিয়ম না মেনে মাঠে নামছে। নিয়মিতভাবে খেলোয়াড়দের পেমেন্ট দিচ্ছে না। সব ক্লাবগুলোতে পেশাদারিত্ব মনোভাব ফুটে উঠেনি।
পরিশীলিত রুচিবোধ সম্পন্ন হওয়া
প্রত্যেক ব্যক্তিরই চেষ্টা থাকা উচিৎ তিনি যে পেশায় নিয়োজিত থাকবেন সেখানে সফলতা অর্জন করা, পেশাদারি মনোভাব অর্জন করা। পেশাদারিত্ব অর্জনে- নিয়োগকর্তার কথা ও নির্দেশাবলী মনোযোগ দিয়ে শোনা, কোনো বিষয় বা কাজ বুঝতে না পারলে পুনরায় জিজ্ঞেস করে নেয়া অথবা সম্ভব হলে প্রথম বার হাতে কলমে দেখিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা দরকার। নিজেকে জাহির করার প্রবণতা না থাকা, নিজেকে অবসাদগ্রস্ত হতে না দেয়া, আবেগকে সংযত করা, ষ্টিশীল ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ এবং অন্য কোনো সাহায্যকারী থাকলে তার সাথে সুনির্দিষ্টভাবে কাজ ভাগ করে নেয়া পেশাদারিত্ব রক্ষা করে। প্রতিষ্ঠান যদি নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের দিক থেকে পরিশীলিত হয়, সত্য প্রকাশের দিক থেকে সাহসী হয়, দেশ ও জাতির প্রতি দায়বোধ থাকে, সমাজের ন্যায্যতার পক্ষে থাকে; তবে সেখানকার পেশাদারিত্ব সম্পন্ন মানুষ বেশি নিরাপদ। সামাজিক দায়বদ্ধতা, পরিশীলিত রুচিবোধ, সুস্থ সংস্কৃৃতি বোধ- সম্পন্ন মানুষ অপশোদার হতে পারেন না।
শৃঙ্খলা বজায় রাখা
পেশাদারিত্ব গড়ে উঠলে কাজ সুন্দর হয়, সম্ভাবনার বিকাশ সহজ হয়। পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করার অঙ্গীকার উন্নতির স্বার্থে বেশি প্রয়োজন। যোগ্য কর্মীর অভাব থাকলে অত্যন্ত উঁচুমানের পেশাদারিত্ব দূরে থাক, ন্যূনতম পেশাদারিত্ব নিয়েও এগুতে পারে না অনেক প্রতিষ্ঠান। অপেশাদার অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল অন্য পোর্টালের সংবাদ নির্লজ্জভাবে চুরি করে কিছুটা পরিবর্তন করে বা হুবহু প্রকাশ করে, কপি এবং পেস্টের মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি করে, ল্যাপটপ সাংবাদিকতা করে। খায়েশ পূরণের নিউজ পোর্টালগুলোর কারণেই অনলাইন গণমাধ্যমের গায়ে দুর্নাম লেগে গেছে আঁতুড়ঘরেই।
ফিটনেস ও পরিশ্রম
আপনি যে জায়গায় কাজ করেন না কেনো পেশাদারিত্ব ভীষণ জরুরি। কী অভিনয়ের শিল্পী, কী গানের শিল্পী, কী কবিতার শিল্পী, কী শিক্ষক, কী সাংবাদিক, কী গৃহিণী কিংবা একজন ব্যক্তিমানুষেরও পেশাদারিত্বের প্রয়োজন রয়েছে। একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পেশাদারিত্বের কোনো বিকল্প নেই। পেশাদারিত্ব অবশ্যই থাকতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে পেশাদারি না হলে শিল্পীসত্তা একসময় মুখ থুবড়ে পড়বে। প্রতিদিনের জীবনে ডিসিপ্লিন আনাই হচ্ছে পেশাদারিত্বের প্রথম শর্ত। প্রতিদিনের জীবন কোন গতিতে চলে, কোন ধারাবাহিকতায় চলে, তার ওপর কিন্তু নির্ভর করছে সমস্ত ক্যারিয়ার এবং পেশাদার কি না সেটাও। ফিটনেস সবার দরকার। এনার্জি না থাকা, একটু পর পর হাঁপানো, একটু গরমেই হাইপারটেনশন হওয়া, নানান ব্যথা, কাশি- প্রতিদিনের জীবন যাপন প্রণালির ফলাফল। সততা, নিয়ম-শৃঙ্খলা, জীবনযাপনে সুশৃঙ্খল হওয়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস খুব প্রয়োজন। প্রকৃত পেশাদার হবার ক্ষেত্রে কোনো শটকাট পথ নেই, পরিশ্রম করেই পেশাদারিত্ব অর্জন করতে হয়।
জীবনাচারে সুশৃঙ্খল
পেশাদারিত্ব মানে হচ্ছে জীবনাচারে আপনাকে অবশ্যই সুশৃঙ্খল একজন মানুষ হতে হবে। কাজেই শুধু সুস্থ স্বাভাবিক জীবনাচার, সুশৃঙ্খল জীবনাচার একজন অভিনয়শিল্পীর জন্যই প্রযোজ্য নয়। আপনার সুন্দর করে বেঁচে থাকার জন্যও দরকার। আপনি যদি ঠিকঠাক খাবার না খান, আপনার কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে, আপনার প্রেসার বেড়ে যাবে, আপনার কিডনির প্রবলেম হবে। আপনি যদি রাত জাগেন, আপনার চোখের নিচে কালি পড়বে, চোখ ডেবে যাবে। একজন শিল্পীর যদি চোখের নিচে কালি পড়ে বা একজন শিল্পী যদি রাত জাগে, তার ফিজিকাল অন্য অনেক বাজে রকম উপসর্গ তৈরি হবে। আপনি অভিনয় তো দূরের কথা, একজন অন্য মানুষ হিসেবেও বাঁচতে পারবেন না।
দায়িত্বশীলতা ও সততার সাথে কাজ করা
সুশৃঙ্খল জীবনযাপন সব মানুষের জন্য প্রয়োজন। পাবলিক নুইসেন্স না করা, যেটা দেখে অন্য মানুষ কপাল কুঁচকে তাকাতে না পারে। জীবিকার প্রশ্ন হচ্ছে রুটিরুজির জায়গা, যেখান থেকে কিছু অর্থনৈতিক সাপোর্ট আসে; সেটাই পেশাদারিত্ব নয়। পেশাদারিত্ব হচ্ছে, সততা দিয়ে দায়িত্বের সাথে কাজ করা।শুধু টাকা অর্জন করার জন্য দায়িত্বের সাথে কাজ করা যায় না।অথচ দায়িত্ব নিয়ে ভালোভাবে কাজ করলেই মানুষ একটু সম্মান করে, ভালোবাসে এবং পয়সাও পাওয়া যায়। পেশাদারিত্বের সাথে জীবিকার সম্পর্ক আছে, তবে জীবিকাই সবকিছু নয়। ভালোবেসে হান্ড্রেড পারসেন্ট দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করলে পেশাদারিত্ব ঠিক থাকে না, জীবিকাও মার খায় আজ না হয় কাল।
সফট স্কিল
ভালো বক্তব্য দিতে পারা কিংবা নেটওয়ার্কিং করতে পারা- একটি মানুষের এধরনের নন-টেকনিক্যাল স্কিলগুলোকেই বলা হয় সফট স্কিল। চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে,চাকরিতে পদোন্নতি দেওয়া, সকল ক্ষেত্রেই সফট স্কিলেকে গুরুত্ব দেওয়া হয় অনেক। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে যার সাথে কথা বলা হবে, তার কথা বলার ভঙ্গিমা কিংবা ধরনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে কোন কিছু বোঝাতে পারার সক্ষমতা। বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়তে আমাদের যে দক্ষতাটির প্রয়োজন সেটিই হচ্ছে নেটওয়ার্কিং। মনে মনে যা ভাবি সেটি বানান কিংবা ব্যাকরণ- সব ঠিক রেখে নিজের লেখার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা রাইটিং স্কিল। যেকোন জায়গাতেই সঠিক ভঙ্গিতে ও উচ্চারণে গুছিয়ে কথা বলা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারা লিসেনিং স্কিল, যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে সময়মতো অফিসে উপস্থিত থাকা, যে কোনো কাজ সময়মতো করে দেওয়া কিংবা সঠিক জায়গায় সঠিক পোশাক পরা, নিজের কোন কাজের ব্যর্থতা নিজে নিতে শেখা, অন্যকে দোষারোপ না করা উচিৎ।
মিলেমিশে কাজের মানসিকতা
দলের সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করার মানসিকতা ও সক্ষমতা থাকা উভয়ই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, নিজের মতামত ঠিকভাবে দিতে পারা, দলনেতার নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করা, কঠিন সময়েও চিন্তা করে সহজ সমাধান বের করা, সবসময় অন্যের কথা অনুসরণ না করে নিজে চিন্তা-ভাবনা করা, সৃষ্টিশীল হিসেবে প্রমাণ করা, কর্মক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনশীল কাজগুলো সহজে আয়ত্তে এনে তার প্রয়োগ করা দরকার।কাজের চাপে বিরক্তি প্রকাশ, কথা ও ভাব-ভঙ্গীতে ব্যাপক যন্ত্রণায় থাকার প্রকাশ, কাজে মন বসাতে না পারা, নাক সিঁটকানো স্বভাব, সমাধানের চেষ্টা না করেই সমস্যা নিয়ে ক্রমাগত অভিযোগ করা তথা নেতিবাচক আচরণ অপেশাদারিত্বের নামান্তর।
বিরক্তিকর আচরণ ও অভদ্রতা
কাজের টেবিলে বসে সেলফি তুলা, সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক সময় দেয়া, স্মার্টফোনে গেম খেলার মানে কাজে ফাঁকি দেয়া। সহকর্মীদের সাথে চায়ের টেবিলে বসে আড্ডায় হারিয়ে যাওয়া, সেলফোনে অনবরত কথা বলা, অফিসের জরুরি কাজ ফেলে ব্যক্তিগত কাজে প্রচুর সময় দেয়া পেশাদার আচরণ নয়। ব্যবহৃত টিস্যুটা টেবিলে ফেলে রাখা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাবোধ নয়। অস্বস্তিকর শব্দে ঢেকুর তোলা বাজে অভ্যাস। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলে অন্যের কাছে বিরক্তিকর হতে হয় । শোরগোল করা বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করা ভদ্রলোকের কাজ নয়। আসলে রাগারাগি-গীবত-পরনিন্দা-চোগলখুরি-হিংসা আর ষড়যন্ত্র করার মতো নেতিবাচকতা নিয়ে পেশাদার আচরণ করা যায় না। অপেশাদার আচরণের পর শুধু তিরস্কার যথেষ্ট নয়,শাস্তি-জরিমানা-নিন্দা-তিরস্কারের মুখোমুখি করা দরকার; না হলে সুস্থ সংস্কৃতি থাকবে না।