নীলিমা চৌধুরী : আমরা বাংলায় লেখার সময় বানানের ভয় করি না, ইচ্ছামতো লিখি। অথচ ইংরেজিতে লেখার সময় আচরণ থাকে উল্টো, ভুলভাবে বানান লেখার ভয়ে মরি। এই ভয় পাওয়া থেকে অনেক সময় ইংরেজিতে আর লেখা হয়ে ওঠে না।
অথচ আমাদের আচরণ হওয়া উচিত ঠিক বিপরীত। বাংলা লেখার সময়ই বানানের ভয় করা উচিত, যেহেতু এটি মাতৃভাষা। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাতে দখল থাকবে; বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয় জীবন বাদ দিলে বারো বছর তো বাংলাতেই পড়া হয় (গুটি কয়েক ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে)। একে তো মাতৃভাষা, তার ওপর বারো বছর ঠিকভাবে পড়লে শেখার কিছু বাকি থাকার কথা নয়।
অন্যদিকে ইংরেজি বিদেশি ভাষা। জন্মের পর এখানে মায়ের মুখ থেকে ইংরেজি শোনা হয় না, দুশো বছর ইংরেজের শাসনের পরও এখানে আশেপাশে কেউ ইংরেজিতে কথা বলে না। সুতরাং ইংরেজি ভাষা শেখাটা এখানে আসলেই কঠিন। কোলের শিশুরা যেমন আধো আধো ভুল উচ্চারণে বাংলা বলতে বলতে একসময় মাতৃভাষা ধরে ফেলে, ইংরেজি শেখার কৌশল হলো প্রাথমিক অবস্থায় ভুল-ভাল বলতে থাকা এবং আরও বেশি বেশি কথা বলতে থাকা। গ্রামারে ভুল হলেও ধুমসে লিখতে থাকা।
অথচ ইংরেজি লেখার বা বলার সময় আমাদের অনেকে গ্রামারে ইংরেজদের চেয়েও বেশি সতর্ক হওয়ার চেষ্টায় রত থাকেন। যিনি ভালো পারেন তার কথা ভিন্ন। কিন্তু যিনি শিখছেন বা কম পারেন তার জন্য খুব একটা আবশ্যক নয় গ্রামারে নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করা। এতে তার লেখার বা বলার প্রচেষ্টা বাধাপ্রাপ্ত হবে। বস্তুত কোনো দেশের মানুষই গ্রামার মেনে কথা বলে না। আমেরিকার মানুষও বলে, আই অ্যাম নট অ্যামেরিকান। এখানে অ্যামেরিকান বলার আগে ‘অ্যান’ আর্টিকেল যে বাদ পড়ল এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই তাদের। অথচ বিদেশি ভাষা হওয়ার পরও আমাদের মনোযোগ থাকে ইংরেজি নির্ভুলভাবে বলা ও লেখার ব্যাপারে। প্রাথমিক অবস্থায় এর মোটেই প্রয়োজন নেই।
অনেক কোচিং সেন্টার তরুণ-তরুণীদের পরামর্শ দেয়- ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য ইংলিশ মুভি বেশি বেশি দেখার জন্য। আমি বলি এ সব পণ্ডিতের কথা স্রেফ ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। ইংলিশ মুভি উপকারে দেবে না তা বলছি না, তবে সেটা দেয় অ্যাডভান্স লেভেলে। ইংলিশ মুভিতে চরিত্রদের মুখে যে অ্যাকসেন্ট থাকে তা অনেকের জন্য ফলো করা বা অনুসরণ করাই তো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।
নবাগতদের জন্য ইংরেজি শেখার একমাত্র উপায় প্রতিদিন ইংরেজিতে কথা বলা। যারা ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না, অথচ শিখতে চান- প্রথম কথাই হচ্ছে আপনি প্রতিদিন ইংরেজিতে কতক্ষণ কথা বলেন? যদি না-বলে থাকেন, তবে কোচিং সেন্টারের ভালো ভালো কথা ও ইংলিশ মুভি বেটে খাওয়ালেও আপনি ইংরেজি শিখতে পারবেন না।
যেসব তরুণ-তরুণী ইংরেজি ভাষা শিখতে চান, তাদের উচিত বাংলা বানান যেমন ভুলভাবে লিখেও অনেকের কোনো বিকার হয় না, সেরকম নির্বিচারে ইংরেজিও ভুলভাবে হলেও অনবরত লিখে যাওয়া। আপনি নিশ্চিত থাকুন এই ভুলের মাত্রা দিন দিন কমে আসবে।
প্রশ্ন করতে পারেন, তবে যারা বাংলায় ভুল বানানে লেখেন, তাদের ভুলের মাত্রা কেন দিন দিন কমে আসে না। কমে আসে না, কারণ তারা ক্রনিক ডিজিজে ভুগছেন। আর কে না জানে ক্রনিক ডিজিজ সহজে ভালো হয় না, যতটা ভালো হয় একিউট ডিজিজ।
মাতৃভাষা ভুলভাবে লেখা হচ্ছে ক্রনিক ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ যার সহজ কোনো নিদান নেই।