ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : আমরা অনেকেই নিজের মতটি যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হই। অন্যকে খুশি করতে গিয়ে নিজের পছন্দ-অপছন্দকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেন। সবার কথায় সায় দেয়া, সবার খুশির দিকে সবসময় খেয়াল রাখা- এই অভ্যাসটি একটা সময়ে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। যা একজনের ব্যক্তিজীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। জেনে নিন, সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে কোন কাজগুলো করলে জীবনে কখনোই উন্নতি করতে পারবেন না।
১. সবার সব বিষয়ে একমত হবার ভান করা
কারোর কোনো মতামতের সাথে একমত হতে না পারলেও ধৈর্য ধরে বিনয়ের সাথে শোনা দারুণ একটি সামাজিক দক্ষতা। কিন্তু, নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়েও সব সময় অন্যের সাথে একমত হওয়াটা খুবই বাজে ব্যাপার। শুধু অন্যের কাছে ভালো হতে চান বলে আপনি এমন কোনো বিষয়ে একমত হচ্ছেন, যা আপনার দর্শন, বিশ্বাস বা চরিত্রের সাথে একেবারেই মেলে না।
২. অন্যের সুখ-দুঃখের জন্যে নিজেকে দায়ী ভাবা
এটা খুবই ভালো অভ্যাস যদি নিজে ভাবতে পারেন যে, আপনার আচরণের ওপর অন্যের আবেগ অনুভূতি নির্ভর করছে। কিন্তু, আপনি যদি এটা ভাবেন যে, সবাইকে খুশি করা ও রাখার দায়িত্ব শুধু আপনার এবং এই দায়িত্ব শুধু আপনাকেই পালন করতে হবে- তবে আপনি খুবই ভুল ভাবছেন!
৩. আপনি খুব ঘন ঘন ‘স্যরি’ বলেন
আপনি খুব ঘন ঘন ‘স্যরি’ বলেন। এর পেছনে একমাত্র কারণ- আপনি সবকিছুতেই নিজেকে দোষারোপ করতে থাকেন। আপনি সবসময় ভয় পান যে, কোনো কিছুর জন্যে অথবা কোন ঘটনার জন্যে আপনার আশেপাশের মানুষজন শুধু আপনাকেই দায়ী করবে। ফলে কারণে-অকারণে প্রতি মুহূর্তেই আপনি স্যরি বলতে থাকেন, যা অনেক বড় একটি চারিত্রিক ত্রুটি।
৪. আপনার মাথায় সবসময় অনেক কাজের বোঝা
আপনি প্রতি দিন কী কী কাজ করবেন বা করবেন না, সেটা একান্তই আপনার সিদ্ধান্ত। তবে, আপনি যদি সবসময় অন্যের খুশিকে প্রাধান্য দিতে থাকেন, তাহলে আপনার মাথার ওপর অনেক কাজের বোঝা এসে পড়বে। কারণ আপনি মনে করেন যে- আপনার আশেপাশের মানুষকে খুশি রাখতে তাদের কাজগুলোও নিজের নিয়ে নেওয়া উচিৎ! আর এভাবে অন্যের কাজ করতে করতে হয়তো এক সময় নিজের কাজেই পূর্ণ মনযোগ দিতে পারবেন না।
৫. কখনোই ‘না’ বলতে পারেন না
কেউ যেন মনে কষ্ট না পায় সেজন্যে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কে হ্যাঁ বলে দেন। আপনি কাউকে ‘না’ বলতে পারেন না। যদিও, আপনি হ্যাঁ বলেছেন কিন্তু তা আপনার মতের বিরুদ্ধে গিয়েই বলছেন। অথচ আপনি ‘না’ বলার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছেন। নিজের মনের বিরুদ্ধে হ্যাঁ বলার পর, একদম শেষ সময়ে কোনো অজুহাত দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে ফেলেন। এ ধরনের আচরণ আপনার ক্যারিয়ার বা ব্যক্তিগত জীবনের জন্যে ভয়ানক হতে পারে।
৬. আপনার ওপর কেউ রেগে থাকলে আপনি অস্বস্তিতে ভোগেন
আপনার ওপর কেউ রাগ করে আছে মানেই আপনি কোনো ভুল করেছেন এমন নয়। মানুষের আবেগ সবসময় কারণ মেনে ও সঠিক নিয়মে চলে না। কিন্তু আপনি যদি নিজের শক্ত অবস্থান ধরে না রাখেন এবং সবসময় খুঁত খুঁত করতে থাকেন- কেন সে রেগে আছে, তবে জীবনে এগিয়ে যাওয়া আপনার জন্য খুবই কঠিন হবে।
৭. যখন যার সাথে থাকেন, তার মতোই আচরণ করেন
ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সাথে চলা বা মেশার সময় আপনার আচরণে ভিন্নতা আসবে। এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে কেন এই পয়েন্ট এইখানে উল্লেখ করা হলো? এর কারণ হচ্ছে- যারা সবসময় অন্যকে খুশি রাখতে চান, তারা আচরণের এই ভিন্নতার মাত্রা অতিক্রম করে ফেলেন। অনেক সময় তারা এমন আচরণ করেন, যা তাদের নিজের স্বভাব-চরিত্রের সাথে একেবারেই বেমানান।
৮. সবসময় নিজের প্রশংসা শুনতে চান
নিজের প্রশংসা শুনতে আসলে সবাই ভালবাসেন। কিন্তু, আপনি যখন সবসময় অন্যকে খুশি রাখার প্রচেষ্টায় থাকেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি চান অন্যরা আপনার প্রশংসা করুক। কিন্তু সবাই আপনার প্রশংসা না-ও করতে পারে। অথচ আপনি সবসময় সব ক্ষেত্রে, সবার কাছেই প্রশংসা প্রত্যাশা করেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজের প্রতি আপনার বিশ্বাস ও আস্থা এতই কমে যেতে পারে যে, প্রতিটি পদক্ষেপেই আপনার অন্যের মতামতের ওপর নির্ভর করতে হয়।
৯. ঝামেলা এড়াতে মনের বিরুদ্ধে কাজ করেন
ব্যক্তিগত জীবনে বা চাকরিক্ষেত্রে- কোনো ঝামেলা যেন না হয় সেজন্যে বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করা দারুণ একটি চারিত্রিক গুণ। তবে আপনি যদি কোনো ঝামেলা এড়াতে নিজের মত, বিশ্বাস, স্ট্যান্ডার্ড কিংবা অবস্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করে থাকেন, তবে এর মাধ্যমে কিন্তু আপনি নিজেকেও ছোট করে ফেলছেন। নিজের উন্নতির পথগুলোও রোধ করে ফেলছেন একই সাথে।
১০. কষ্ট পেলেও স্বীকার করেন না
আপনি কখনোই সুস্থ, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন কোনো সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন না, যদি আপনি আপনার সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতিগুলোকে স্বীকার করতে না শেখেন। নিজের কষ্ট নিয়ে সরাসরি কথা বলতে শেখেন। এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার যে, আপনি কখনো কখনো আপনার চারপাশের মানুষের কোনো আচরণে কষ্ট পাবেন। এটা স্বীকার করে, তাদেরকে সরাসরি জানানোর মাধ্যমে আপনি কোনো ভুল কাজ করছেন না। বরং সম্পর্কটা মজবুত করছেন। কিন্তু অন্যের খুশি-অখুশির ব্যাপারগুলো যদি আপনার মনে খুব বেশি কাজ করতে থাকে, তবে আপনি এই কাজটি কখনোই করতে পারবেন না। আপনার রাগ, জেদ, মনোকষ্ট, হতাশা আপনি নিজের মধ্যে চেপে রেখে দিবেন। যা আপনার জীবনে উন্নতির ক্ষেত্রে জন্যে অনেক বড় একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে।
অন্যকে খুশি করার মধ্যে যদি আপনার মানসিক প্রশান্তি কাজ করে, তা খুবই চমৎকার। তবে সব কিছুর একটা সীমারেখা থাকে, যেটা অতিক্রম করলে ক্ষতিটা হয় নিজের। নিজের মূল্যবোধ, নিজের ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস, মতামতকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে শিখুন। নিজেকে মূল্যায়ন করতে শিখুন। অন্যের কাছে নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করুন। নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা, নিজের উন্নতি ও একটি ভালো ভবিষ্যতের জন্যে এসব নিয়ম মেনে চলা খুবই প্রয়োজন।
সাইকোলজি টুডে