চাকরির আবেদন করতে হলে জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি পাঠাতে হয়। কিন্তু একজনের ব্যক্তিগত ও পেশাজীবনের বিবরণ দেওয়ার জন্য কাগজের দুই পৃষ্ঠা কি পর্যাপ্ত? নিশ্চয়ই নয়। দিন যেমন বদলাচ্ছে, বাতিল হচ্ছে পুরোনো ধ্যানধারণাও। বিশ্বের বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন সিভি দেখে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ করেছে।
নতুন প্রযুক্তি, অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ এবং লিংকডইনের মতো যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব বেড়েছে। ফলে চাকরির বাজারে সিভির অস্তিত্ব ধরে রাখা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ছে! আর সিভি পাঠিয়ে চাকরি জোগাড় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যাও রয়েছে। প্রচলিত সিভিতে তো ভুলভাল তথ্য থাকে প্রায়ই। তাই সেটা দেখে একজন কর্মীর আসল যোগ্যতা সম্পর্কে ঠিকঠাক ধারণা পাওয়া নিয়োগদাতা কর্তৃপক্ষের জন্য অবশ্যই কঠিন। আবেদনকারীর সংক্ষিপ্ত তালিকা যদি কেবল সিভির ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়, হয়তো এমন কেউ বাদ পড়ে যাবেন, যিনি আসলে পদটির জন্য সবচেয়ে উপযোগী ছিলেন। সিভিতে তো সব যোগ্যতা তুলে ধরা যায় না। আর এই পদ্ধতির আরেকটি সমস্যা আছে। সেটা হলো, সিভিতে লেখা তথ্যের সত্যতা প্রায় সময়ই যাচাই করা হয় না। ফলে বাড়তি বা অতিরঞ্জিত তথ্যের সমাহার ঘটার সুযোগ থাকে। যুক্তরাজ্যে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আবেদনকারী নিজেদের যোগ্যতা সম্পর্কে বাড়িয়ে লিখতে পছন্দ করেন।
এ যুগের পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইন অনেক পরিবর্তন এনেছে। এখানে ব্যক্তিগত তথ্যাবলি যাচাই করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে কর্মী নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চাকরিপ্রার্থীর লিংকডইন প্রোফাইল দেখে খোঁজখবর নিতে পারে। এভাবে জেনে নেওয়া যায় তিনি কর্মক্ষেত্রে কেমন পরিবেশের উপযুক্ত, তাঁর ব্যক্তিত্ত্ব ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট লোকজনের মন্তব্য ও সুপারিশ ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে সিভির সীমাবদ্ধতাগুলো এড়ানো যায়।
এ যুগে আরও অনেক উপায়ে চাকরির আবেদন করা যায়। যেমন ভিডিও সিভি, নিজস্ব ওয়েবসাইট ও টুইটার। অনলাইনে চাকরির আবেদন করাটাও জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষ করে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সংক্ষেপে ও দ্রুততম সময়ে যোগ্য কর্মী নিয়োগের জন্য অনলাইননির্ভর মাধ্যম ব্যবহার করে। তারা অনলাইনেই পরীক্ষা নেয় এবং কর্মীদের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা যাচাই করে।
তাই লিংকডইনে তথ্য হালনাগাদ রাখতে হবে আপনাকে। অনলাইনে আবেদন ও ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকার দেওয়াটাও এখন চাকরিপ্রার্থীর দক্ষতার আওতায় পড়ে। আগামী দিনের চাকরিতে দক্ষতাই হবে মূল যোগ্যতা, যা কিনা পড়াশোনা বা অভিজ্ঞতাকে ছাপিয়ে যাবে। সিভি তখন চাকরির আবেদন করার একমাত্র মাধ্যম বা উপাদান হিসেবে থাকবে না। অবশ্য রাতারাতি সিভি বাতিল হচ্ছে না। এখনো অধিকাংশ জব ওয়েবসাইটে সিভি আপলোড করতে হয়। পাশাপাশি নির্দিষ্ট চাকরির প্রয়োজন অনুযায়ী আবেদনপত্র বা কভার লেটার পাঠানোর প্রচলন রয়েছে। তবে যুগের চাহিদা মাথায় রেখেই আধুনিক নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করা ভালো। সিভি তো তৈরি করবেনই, পাশাপাশি নিজের লিংকডইন প্রোফাইলও হালনাগাদ রাখুন। ভিডিও ইন্টারভিউয়ের জন্যও প্রস্তুতি নিন। হয়ে উঠুন আগামী দিনের উপযোগী কর্মী। যে পদ্ধতিতেই নিয়োগ করা হোক না কেন, আপনি যেন অবশ্যই শীর্ষ পছন্দ হতে পারেন। গার্ডিয়ান অবলম্বনে
সূত্র: প্রথম আলো