হাসান মাসুদ। এ সময়ের অতি জনপ্রিয় এক অভিনেতা। ২০০৩ সালে ব্যাচেলর ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ। এরপর নিজের যোগ্যতা ও প্রচেষ্টা দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এ অঙ্গনে। তবে অভিনেতা হওয়ার পূর্বে তিনি গ্রহণ করেছিলেন আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। একটি সেনা কমকর্তা। অপরটি সাংবাদিকতা। প্রথম পেশাটি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব পরিকল্পনা না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই দুর্বলতা ছিল লেখালেখির প্রতি। তবে এ দুর্বলতাটি এসেছে তার বাবা মাসউদুর রহমানের পেশাকে অবলোকন করে। পেশাগত জীবনে যিনি ছিলেন চলচ্চিত্র প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক।
নিজের বেড়ে ওঠা, কর্মজীবন ও বর্তমান অবস্থান এবং নতুন প্রজন্মের ক্যারিয়ার গঠনে তাঁর পরামর্শ -এ সব বিষয়ে ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্সের সাথে খোলামেলা কথা বলেছেন হাসান মাসুদ
আপনার বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলবেন কি?
– বেড়ে ওঠার কথাটা আসলে খুব অল্প করে বলা যাবেনা, কারণ একটি মানুষের মস্তিষ্কে যতটুকু স্মৃতি জমা থাকে তার অধিকাংশই মনে হয় শৈশবের। আর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে শৈশবই মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আপনি কোন জিনিসটি জানতে চাচ্ছেন সেটি পরিষ্কার করে বললে আমার জবাব দিতে অনেক সহজ হবে।
শৈশব কোথায় কেটেছে?
– ঢাকার আজিমপুরেই বড় হয়েছি। তবে বাবার চাকরির কারণে ১৯৬৮ সালে যেতে হয় ইসলামাবাদে। সেখানে পাঁচ বছর থেকে ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে এসে ভর্তি হই নবকুমার ইনস্টিটিউডে। এ স্কুল থেকেই এসএসসি। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করি তিতুমীর কলেজ থেকে। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করি বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে।
আপনার কর্মজীবন নিয়ে মানুষের অনেক কৌতুহল- এ বিষয়ে কিছু বলুন?
– আমি খুব অল্প বয়সেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। এইচএসসি পাশ করার পর ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে। ১৯৯২ সালে এই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিই। এরপর কাজ করি নিউ ন্যাশন ও ডেইলি স্টার পত্রিকায়। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সাংবাদিকতা করেছি বিবিসিতে। তবে এর মধ্যেই আমি ২০০৩ সালে ব্যাচেলর ছবিতে কাজ করার মাধ্যমে অভিনয় জগতে প্রবেশ করি। ২০০৪ সাল থেকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিই।
বেশ কয়েকবার পেশা পরিবর্তনের কারণ কী?
– আসলে এর কোন উল্লেখযোগ্য কারণ নেই। তবে আমি সব সময় মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিই। আর পেশার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনটা এসেছে তা নিতান্তই ইচ্ছা থেকে।
বর্তমান ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?
– বলতে পারেন ১০০%।
বর্তমান অবস্থানে আসতে আপনাকে কোন জিনিসটি সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে?
– আমার আত্মবিশ্বাস ও সততা। আমি মনে করি, কোন একটি কাজ করার ক্ষেত্রে নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস এবং কাজের প্রতি সম্মানবোধ থাকতে হবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, আমি যখন ব্যাচেলর ছবিতে কাজ করি তখন আমার মনের ভেতর প্রচণ্ড রকমের একটি আত্মবিশ্বাস ছিল যে, আমি কাজটি ভালোভাবেই শেষ করতে পারব। অবশ্য এক্ষেত্রে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীরও অনেক অবদান রয়েছে।
কাঙ্খিত ক্যারিয়ার অর্জনে তরুণদের কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
– এক্ষেত্রে আমি ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি চিন্তা করতে নিরুৎসাহিত করব। আমি মনে করি, মানুষ ছোট বেলা থেকে যে কাজগুলো করে বড় হয়, তার মধ্যে নিজের ভালোলাগার কিছু বিষয় লুকিয়ে থাকে। আর ওই ভালোলাগা বিষয়ের একটিকে তার ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়া উচিত। কারণ এভাবে ক্যারিয়ার নির্বাচন করলে কাজটাকে উপভোগ করা যায়। যা মানুষকে আনন্দে সময় কাটাতে সহযোগিতা করে। তবে হ্যাঁ, এখানে দুটি জিনিস সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। তা হলো- কাজ করতে পারব এমন আত্মবিশ্বাস এবং সব ক্ষেত্রে সততা গুণটিকে বজায় রাখা।
আপনিতো এ পর্যন্ত অনেক দেশ সফর করেছেনে। বাইরে বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো ও আমাদের অঞ্চলের তরুণদের মধ্যে আপনি ক্যারিয়ার ভাবনায় কী পার্থক্য লক্ষ করেছেন?
– ইউরোপিয় অঞ্চলের তরুণরা যখন কোন কাজ করে তখন তার প্রতি অনেক সিরিয়াসনেস লক্ষ করেছি। তবে কাজের বাইরে তার সব সময় আনন্দ-ফুর্তিতে থাকার চেষ্টা করে। বিশেষকরে ছুটি পেলেই তারা অবকাশ যাপনে দূরে কোথাও চলে যায়। আবার ছুটির দিনে প্লেনে অনেক দূরে যাওয়ার কাজটিও সেরে নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের উপার্জিত টাকা ব্যয় করে ভ্রমণে বের হয়। পক্ষান্তরে, আমাদের অঞ্চলের বা দেশের মানুষের মধ্যে এ ধরণের কোন স্পৃহা তো নেই-ই বরং প্রতিনিয়ত তারা হতাশায় ভোগে। যে কারণে তারা কোনো কাজ ভালোভাবে শেষ করার ক্ষেত্রে যেমন হিমশিম খায়, তেমনি আনন্দ উপভোগ থেকেও অনেকাংশে বঞ্চিত হয়। তাই তরুণদের প্রতি আমার একটি পরামর্শ থাকবে- তারা যেন কাজে মনোযোগের পাশাপাশি উপভোগ প্রবণতাটাও বৃদ্ধি করে।
আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন?
– স্ত্রী শিমুল, ছেলে সূর্য , মা আর আমি মিলে ৪ জনের ছোট একটি পরিবার আমার।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ
আলমগীর কবির
প্রতিবেদক, ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স