মো: বাকীবিল্লাহ
পড়াশোনা শেষে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই আগ্রহ চাকরিতে। ফলে চাকরির বাজারে বিরাজ করছে ভয়াবহ প্রতিযোগিতা। আর এ প্রতিযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে অসাধু চক্রের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। আপনাকে যদি টাকার বিনিময়েই চাকরি নিতে হয়, তাহলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে না জড়িয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করাই ভালো। তাছাড়া অনেকে এমনিতেই উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়টি মনমগজে লালন করেন। কিন্তু সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রচুর পরিশ্রম করার মানসিকতা ও সামর্থ্য থাকতে হবে। দরকার কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও ভালোবাসা, ঝুঁকি নেয়ার সাহস এবং বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা।
এছাড়াও রয়েছে কিছু বৈশিষ্ট্য, যেগুলো সফল উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশে অপরিহার্য।
অকৃত্রিম মানুষ
বর্তমানে প্রায় সবাই নিজ পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। কেউ বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন, আবার কেউ বিভিন্ন মাধ্যমে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন। এসবের মধ্যে নিখাদ বা অকৃত্রিম মানুষ হতে পারলে অবশ্যই তা হবে কারো জন্য একটি বিরল গুণ। এ গুণটির অধিকারী হলে প্রতিযোগিতার দৌড়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন। কারণ সবাই খাটি মানুষের সাথেই কাজ করতে চায়।
ভারসাম্যপূর্ণ জীবন
উদ্যোক্তা হলে আপনাকে আহার-নিদ্রা থেকে শুরু করে সারাক্ষণই ব্যবসা নিয়ে ভাবতে হবে- এমনটা নয়। ব্যাপারটা আসলে সম্পূর্ণ বিপরীত। বড় ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট অবসর পান। তাদের জীবনযাত্রায় ভারসাম্য থাকে। নিজের যত্ন নেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের শারীরিক ব্যায়ামের ধারাবাহিকতা রাখার চেষ্টা করেন। পরিবার-পরিজনদের সময় দেন।
কর্মী ও গ্রাহকদের প্রতি সহানুভূতি
সফল উদ্যোক্তারা শুধু নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করার পরিবর্তে নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও ক্রেতাদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন ও চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। সময়মতো সেই কর্মী ও গ্রাহককে বিভিন্ন সাহায্যও করেন। সারা দিনের কাজ নিয়ে ছুটে বেড়ানোর পরিবর্তে ১৫ মিনিট ব্যয় করুন কোনো গ্রাহক বা সহযোগীর জন্য। তার সাথে কথা বলুন। মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন। এটাই হতে পারে পুরো সপ্তাহে আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সময়।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত
ব্যবসায় দুঃসময় মোকাবিলার জন্য সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ রকম পরিস্থিতিতে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত আপনার ব্যবসায় ধস নামাতে পারে। যখন কোনো কিছু ঠিকভাবে কাজ করে না, বরং পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে যায়, তখন একটু থেমে কৌশল পাল্টে ভিন্ন পথে এগোতে হবে।
স্মার্ট ও মেধাবীদের সাথে রাখা
বিশ্বসেরা উদ্যোক্তারা যে ব্যবসায় বা সংশ্লিষ্ট সবকিছুই জানেন, তা কিন্তু নয়। এমনকি তারা সবচেয়ে বেশি চৌকস বা স্মার্টও নন। কিন্তু তারা জানেন, কখন অন্যের সাহায্য নিতে হয়। আর সে জন্যই তারা স্মার্ট ও মেধাবী লোকদেরকে কাছে রাখেন।
একজন মানুষের পক্ষে সব বিষয়ে ভালো জানা বা দক্ষ হওয়াটা সাধারণত সম্ভব নয়। তাই নিজের দুর্বল দিকটা জানা জরুরি। সেটা হতে পারে বিপণন, বিক্রয়, কর্মী ব্যবস্থাপনা যেকোনো ক্ষেত্রে। সে রকম হলে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রটির জন্য বিশ্বস্ত অন্য কারো সাহায্য নিতে হবে।
না বলতে পারা
উদ্যোক্তাদের সামনে যেসব সুযোগ আসে, প্রায় সবগুলোই লোভনীয় মনে হতে পারে। সব সুযোগ নিতে গেলে সাফল্য ধরা দেয় না। বরং সঠিক সুযোগটাকে অগ্রাধিকার দেয়ার মধ্য দিয়েই পূরণ হয় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। নতুন সম্ভাবনাময় কোনো বাজার বা গ্রাহকের শেষ সময়ে অনুরোধ রাখতে গেলে ভুলের আশঙ্কাই বেশি।
অ্যাপল কম্পিউটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবস যেমন বলেছেন, নতুন কিছু অর্জন করতে গেলে ‘না’ বলাটা জানতে হবে। মনে রাখতে হবে, ‘না’ বলার মানে এই নয় যে মানুষ হিসেবে আপনি আকর্ষণীয় নন। কারণ আপনি তো শুধু নিজের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
সূত্র : অল বিজনেস এক্সপার্টস