সঠিক ক্যারিয়ার বাছাইয়ে করণীয়

ক্যারিয়ার জীবনের সূচনাতেই জটিলতা ও সংকট থেকে বাঁচতে হলে তরুণদের এমন একটি ক্যারিয়ার বেছে নেয়া উচিৎ যেখানে তাদের নিজেদের আগ্রহ ও যোগ্যতার সমন্বয় সাধন সম্ভব। এজন্য ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্ধারণে কলেজ জীবনই হল সর্বোত্তম সময়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ঠাট্টা করে বলছিল- তাদের বাবাদের প্রজন্মের প্রধান সংকট ছিল মধ্যজীবনের সংকট। অথচ তাদের প্রজন্মে এসে তারা এখন প্রথম জীবনেই সংকটে পড়ছে। কারণ স্বপ্নের চাকরি মিলছে না- দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি নম্বর পাওয়ার পরও স্বপ্নের চাকরিটি তার কাছে ধরা দিচ্ছে না।

যেখানে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের সামান্যতম সাফল্যও খুশির সাথে উদযাপন করেন সেখানে কেন আজ আমাদের ৬০ শতাংশ স্নাতক পাস করা তরুণ তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন?

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এমনকি তৃতীয় বিশ্বের যে কোনো দেশের আন্তর্জাতিক মানসম্মত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক পাশ করারাও ক্যারিয়ার নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। যার ফলে ক্যারিয়ারের সূচনাতেই তারা এক ধরনের ‘অপ্রস্তুত’ অবস্থায় পড়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ক্যারিয়ারের সন্ধিক্ষণ
ওই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও শিক্ষার্থীরা ছয়টি সাধারণ ক্ষেত্র খুঁজে বের করেছে যেগুলো নিয়ে পড়াশোনা শেষ ও প্রথম চাকরিতে ঢোকার আগেই কাজ করা দরকার। শিক্ষার্থীরা যে বিশেষ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে বা তাদের যে প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে তার বাইরেই ওই ছয়টি ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়।

  • জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ অর্থাৎ ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য চিহ্নিতকরণ
  • ভালো ভাষাগত যোগাযোগ দক্ষতা (লেখা ও বলা উভয় ক্ষেত্রে)
  • স্মার্টনেসের সঙ্গে কাজ করার দক্ষতা (বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধান, সময়ানুবর্তিতা)
  • কর্ম বা ব্যবসার মূল নীতিমালা সম্পর্কে সচেতনতা
  • প্রথম দেখাতেই কাউকে ভাবভঙ্গিতে প্রভাবিত করার সক্ষমতা (উপস্থাপনের জন্য যোগ্য হওয়া)
  • চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সক্ষমতা (সিভি, ইন্টারভিউ ও পেশাগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার দক্ষতা)।

চ্যালেঞ্জসমূহ
ক্যারিয়ার নিয়ে জটিলতার শুরু হয় মূলত কোনো শিক্ষার্থীকে যখন তার অপছন্দের বা অনাগ্রহের পথে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। এই সংকট আরো চরম আকার ধারণ করে শিক্ষার পদ্ধতির কারণে; যার বেশিরভাগই তাত্ত্বিক এবং পূণরাবৃত্তিমূলক।

এছাড়া প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতনতার ঘাটতির কারণে তারা সমস্যায় পড়ে থাকে। এর প্রধান কারণ বিদ্যালয়ের পাশাপাশি তারা ঘরে এসে বাবা-মার কাছ থেকেও ক্যারিয়ার সম্পর্কে কোনো দিক নির্দেশনা পায় না। এর কারণ সম্ভবত তাদের বাবা-মায়েরাও এমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি।

সমাধান
প্রথমেই শিক্ষার্থীদেরকে তাদের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভাবতে উৎসাহিত করতে হবে। এবং তাদেরকে এমন একটি ক্যারিয়ার বাছাইয়ে প্রণোদনা দিতে হবে যেখানে তারা তাদের আগ্রহ ও যোগ্যতার সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক পাশ করার পর চাকরিতে প্রবেশের মাত্র এক বছরের মধ্যেই তাদের চাকরি ছেড়ে দেয়। এর কারণ, তারা চাকরিতে প্রবেশের আগে নিজেদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে যথেষ্ট গবেষণা করে প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করেন না। এবং তাদেরকে যে পদ প্রস্তাব করা হয় সে পদের জন্য তাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি ও দক্ষতা আছে কিনা তাও বিচার-বিবেচনা করে দেখেন না।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদেরকে কলেজে থাকা অবস্থায়ই সম্ভাব্য কর্মক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ বা অন্তর্বর্তীকালীন কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো, পরামর্শ গ্রহণ ও চাকরির বাস্তব দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ওই গবেষণায় আরো দেখা গেছে, শীর্ষস্থানীয় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা-জীবনেই কর্মক্ষেত্রে কোনো ইন্টার্নশীপের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে না। এর ফলে পাশ করে বের হওয়ার পর তারা যখন কোনো চাকরিতে ঢোকে তা-ই হয় তাদের জন্য জীবনের প্রথম চাকরি।

তৃতীয়ত, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অভিজ্ঞাতাহীন মেধাবীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।

শুধু এমবিএ ডিগ্রিধারীরাই নয় বরং সদ্য স্নাতক ডিগ্রিধারীরাও প্রতিষ্ঠানের জন্য ফলপ্রসু বিনিয়োগ হয়ে উঠতে পারে। ইন্টার্ন করতে আসাদের দিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে ও স্বল্প খরচে স্বতন্ত্র প্রকল্পের কাজ করিয়ে নেয়াও সম্ভব। এর মধ্যদিয়ে একজন চাকরিপ্রার্থীকে সর্বনিম্ন দীর্ঘ দুই মাস ধরে ইন্টারভিউ করার সুযোগও মেলে যার মধ্য দিয়ে পূর্ণকালীন কাজের জন্য মেধাবীদের খুঁজে বের করার একটি পাইপলাইনও মিলে যেতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top