আহমেদ ইফতেখার
চলমান পৃথিবীর সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে আমাদের জীবনধারা। জীবনের সাফল্য নিশ্চিত করতে প্রতিটি মানুষকেই সময়কে আপন করার চেষ্টা করতে হয়। আর তরুণ বয়সে এ চেষ্টা করার মানসিকতা প্রয়োজন অনেক অনেক বেশি। যেকোনো তরুণের জীবনের যত প্রত্যাশা তা প্রাপ্তির শ্রেষ্ঠ বিন্দুতে পরিণত হতে পারে সময়ের সর্বোচ্চ ও যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে। হাতঘড়ির দিকে লক্ষ রেখে নয় বরং মনঘড়ির সাথে হিসাব-নিকাশ করে জীবনে সময়কে বেঁধে নেয়া যায় অদৃশ্য দড়িতে। সময়ের চাকাকে নিয়ন্ত্রণ করার যে মানসিকতা গড়ে তুলতে হয়, তার নাম সময় নিয়ন্ত্রণ। যখন যে কাজটি করা প্রয়োজন, তা ঠিকমতো করতে পারলেই কেবল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সময়কে। আপনার জন্য তুলে ধরা হলো কিছু পরামর্শ, যার মাধ্যমে আপনি সময়কে শুধু শাসন নয় বরং আপনার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন।
ক. শুরুতেই ঠিক করে নিন আগামী দিন আপনার কাজের নির্দিষ্ট কোন বিষয়গুলো সম্পন্ন হওয়া সবচেয়ে জরুরি। সেই কাজটিকে পরবর্তী দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলুন। তবে এ সময় অন্যান্য কাজকেও অবহেলা করলে চলবে না।
খ. জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে কিছু অলস সময় পাবেন। এ অলস সময়ের দৈর্ঘ্যকে দীর্ঘায়িত করা আর তাকে নিজের আপন সঙ্গী ভেবে নেয়া একই কথা। যারা এ বিষয়কে প্রশ্রয় দেন তারাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন আজকের কাজ কালকে হলেও করা সম্ভব। কিন্তু কালকের কাজ যে কালকে করা সম্ভব নাও হতে পারে এটি অলস সময় অনেক সময়ই ভাবতে দেয় না।
গ. তারুণ্যের মূল অস্ত্র গতি। নিজেকে আরো যোগ্য করে গড়ে তুলতে সময়ের সাথে পাল্লা দিতে হবে আপনাকে। আরেকজন সময়কে ব্যবহার করতে পারলে আপনারও তা করতে পারার ক্ষমতা আছে। অনেকেই নিজের অক্ষমতাকে ঢাকতে বারবার সময়কে দোষারোপ করেন। এ জন্য নিজের মনোবিশ্লেষণে জেনে নিন সময় কেন শুধু আপনার প্রতিই এ রকম হয়।
ঘ. শুধু অফিসের সময় কিংবা স্কুল-কলেজে পরীক্ষার সময় সময়কে গুরুত্বপূর্ণ ভাবলে জীবনে অনেক ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে। যারা নিয়ম মেনে চলে তারা অনেক ভালো থাকে।
ঙ. প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, হিসাব কষে আর জীবনের চাওয়া-পাওয়ার বিন্যাসেই সময়কে খরচ করা উচিত। যারা এসব জ্ঞান এতক্ষণ সময় নষ্ট করে গ্রহণ করলেন তাদের ভবিষ্যতে নষ্ট হওয়া সময়ের পরিমাণ কমবে সবচেয়ে বেশি।
চ. প্রথমেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নেয়া উচিত। বয়সের যে মুহূর্তেই আপনি থাকেন না কেন আপনি ভবিষ্যতে কী হতে চান কিংবা ভবিষ্যতে আপনার অবস্থান কোথায় হবে তা আপনাকেই ভেবে নিতে হবে। নিজের নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকলে ভালো, না থাকলে এখনই ঠিক করে নেয়া উচিত। ক্যারিয়ার গ্রাফ চিন্তা করেই জীবনযাপনের ধারা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এ এক্ষেত্রে মা-বাবার পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি আপনার যদি বাড়তি কোনো ইচ্ছে থাকে তবে তাও যথার্থ সময়ে সবার সামনে প্রকাশ করতে পারেন। আপনি যদি ক্রিকেটার বা নৃত্যশিল্পী হতে চান তবে নিয়মিত অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা বা নাচ এবং নিজের শারীরিক ফিটনেসের ওপরও জোর দিতে পারেন।
ছ. সপ্তাহের শুরুতে কিংবা প্রতিদিন নিজের জন্য একটি প্ল্যান রাখা উচিত। শুধু প্ল্যান নয়, চেষ্টা করতে হবে এই লিখে নেয়া জীবনপ্রণালীকে যথাসম্ভব ফলো করা। প্রথম দিকে রুটিনমাফিক কাজ করা অসুবিধা হয়। পরে এটাই সময়কে শাসন করার ক্ষেত্রে মূল অস্ত্র হয়।
জ. সময়ের সঠিক ব্যবহার ছাড়া কখনই নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করা যাবে না। তাই নিজের সময়কেই লাগাম দিয়ে বশে আনতে হবে । নইলে নিজের সময় আর থাকবে না নিজের দখলে।
সূত্র : নয়া দিগন্ত