মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ
কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশ। কৃষিক্ষেত্রের বৈপ্লবিক উন্নয়নের জন্য প্রাণিসম্পদের উন্নয়নও অপরিহার্য। আর এ প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান। প্রাণী চিকিৎসকরাই ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে পরিচিত। দেশে দিন দিন ভেটেরিনারিয়ানদের চাহিদা ও কাজের সুযোগ বাড়ছে। এনথ্রাক্স, বার্ড ফ্লু প্রভৃতির মতো ভয়াবহ জেনেটিক রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে এদের চাহিদা এখন প্রচুর। ফলে ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর অল্প দিনের মধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।
পরিকল্পনা
নিজেকে যদি ভবিষ্যতে সফলতম ভেটেরিনারি সার্জন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই। মূলত এসএসসিতে ভর্তির আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময়। কারণ এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করতে হবে। সেই সাথে এইচএসসিতে জীববিজ্ঞান বিষয়টি অবশ্যই আপনার থাকতে হবে।
কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এই বিষয়ে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক দেড় মাসের মধ্যেই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
শিক্ষা
ভেটেরিনারিয়ান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে হলে অবশ্যই ৪ বছর মেয়াদী ডিভিএম কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। সেই সাথে রয়েছে এক বছর মেয়াদী ইন্টার্নশিপ।
উচ্চতর ডিগ্রি
ডিভিএম পাশ করার পর একজন ভেটেরিনারিয়ান বাংলাদেশেই উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রো বায়োলজি, বায়োকেমেস্ট্রি, ফার্মেসি, পাবলিক হেলথসহ সকল সাবজেক্টে এমএস ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। সেই সাথে উন্নত বিশ্বের যে কোনো দেশের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়ে থাকেন।
চাকরির সুযোগ
ক. বিসিএস-এ ভেটেরিনারি ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিশেষ কোটা। এছাড়া বিসিএস’র অন্য ক্যাডারেও ভেটরা প্রতিযোগিতা করতে পারবে। উল্লেখ্য, কেবল ডিভিএম ডিগ্রিধারীরাই বিসিএস-এ ২৯টি ক্যাডারের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্যাডারে আবেদন করতে পারেন।
খ. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন- FAO, WHO, UNICEF, UNESCO, UN, DFID এই সংস্থাগুলোতে উচ্চ বেতনে চাকরি এবং চাকরির সুবাদে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
গ. বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন- ICDDRB, BLRI, LRI, FRI প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
ঘ. সেনাবাহিনীতে ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য স্বতন্ত্র ‘কোর’ রয়েছে যার নাম RVFC (Remount Veterinary and Farm Core)| Police, BDR, আনসার বাহিনীতে সরাসরি অফিসার পদে নির্দিষ্ট সংখ্যক পদ রয়েছে।
ঙ. আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ঔষুধ কোম্পানিতে ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন রয়েছে।
চ. বিভিন্ন Livestock Product Company যেমন- আইসক্রিম, জুস, বাটার, ক্যান্ডি, কোলা, মিল্ক ও মিট ইন্ডাট্রিতে চাকরির অপার সুযোগ।
ছ. বিভিন্ন চিড়িয়াখানা, সাফারি পার্ক, বনবিভাগে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসক হিসেবে চাকরির সুযোগ।
জ. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন, পাবলিকেশন্স-এ চাকরির সুযোগ।
ঝ. প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, পাঁচতারা হোটেলগুলোতে মিট ইন্সপেক্টর , পাবলিক হেলথ অফিসার হিসেবে চাকরির সুযোগ।
ঞ. বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও পালনের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এছাড়া প্রাইভেট প্র্যাকটিস, ফার্ম বিজনেস, ল্যাবরেটরি, ভ্যাকসিন প্রোডাক্ট ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুবর্ণ সুযোগ তো আছেই।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, খুলশী, চট্টগ্রাম।
ইমেইল : [email protected]
