দৃশ্যপট ১
মাহবুবুল হক। ছাত্রজীবন থেকেই স্বপ্ন সফল উদ্যোক্তা হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। সফলতার সাথে সেটি পরিচালনা করে তিন বছরের ব্যবধানে মালিক হলেন আরো কয়েকটি কোম্পানির। বর্তমানে একটি গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একজন সফল উদ্যোক্তা।
দৃশ্যপট ২
মাহদী হাসান। ছাত্রজীবনে তিনিও স্বপ্ন দেখতেন সফল উদ্যোক্তা হবার। পড়াশোনা শেষ করে করে তিনিও প্রতিষ্ঠা করেন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। পাঁচ বছরেও তেমন কোনো সফলতার দেখা পেলেন না। অবশেষে সব কিছু বাদ দিয়ে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
এমন বিপরীতমুখী দৃশ্য আমরা প্রায়ই দেখি। অনেকেই চান ব্যবসা করতে। সফল উদ্যোক্তা হতে। কিন্তু কেউ হতে পারেন। কেউ পারেন না। কিন্তু কেন? আসুন জেনে নেই সফল উদ্যোক্তার কিছু বৈশিষ্ট্য।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একজন সফল উদ্যোক্তার নিম্নোক্ত গুণাবলী থাকে।
১. আত্মবিশ্বাস
এটি এক জাদুকরি শক্তি যা নিজের কর্মকাণ্ড এবং নিজের শক্তি-সামর্থের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। বলা হয়- আত্মবিশ্বাসই সফলতার মূল শর্ত। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে এ গুণটি থাকা অপরিহার্য।
২. লক্ষ্যভিত্তিক প্রচেষ্টা
ভালো ফল পেতে হলে কোনো কাজ করার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার। আরো দরকার নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা। একজন সফল উদ্যোক্তা শুধু কিছু কাজই সম্পাদন করেন না। বরং সব সময় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে মনযোগী হন।
৩. ঝুঁকি গ্রহণ
একজন সফল উদ্যোক্তা অনুধাবন করেন যে, কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে তিনি ক্ষতির সম্মুখীনও হতে পারেন। তবুও লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঝুঁকি গ্রহণের মতো প্রয়োজনীয় মানসিকতা ও সাহস তার থাকে।
ব্যবসায় উদ্যোক্তা হলেন তারা- যারা সিদ্ধান্ত নেবেন, ব্যবস্থা নেবেন। বিশ্বাস করেন যে, নিজেদের ভাগ্য তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তারা মনে করেন, সফলতা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে না। বরং তা নির্ভর করে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের ওপর।
তাহলে উপরের কোন বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়। আপনি যদি নিজের সামর্থের ওপর আস্থা রাখতে না পারেন, তবে প্রথম যে সমস্যাটি হবে সেটি হলো- লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
আপনার আত্মবিশ্বাসকে উচ্চতর পর্যায়ে রাখতে কিছু কৌশল আলোচনা করা হলো-
ইতিবাচক চিন্তা
ইতিবাচক চিন্তার শুরুটা হবে ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে। কাজ শুরুর আগে মনে করুন, প্রথম ধাপেই ভালো কিছু একটা হবে। নেতিবাচক চিন্তাকে মোটেই প্রশ্রয় দিবেন না এক্ষেত্রে। বিশ্বাস রাখুন, আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে না পৌঁছানোর কোনো কারণই নেই।
মনে রাখবেন, ইতিবাচক চিন্তা সংক্রামক। যখন তা ছড়িয়ে পড়ে- তখন নতুন নতুন বন্ধু, গ্রাহক ও আইডিয়ার জন্ম দেয়।
নাছোড়বান্দার মতো লেগে থাকা
আপনার সব ইতিবাচক চিন্তা, বিশ্বাস ও আইডিয়া পৃথিবীতে অচল যদি আপনি তা কাজে না লাগান। আপনাকে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের অভিযোগ চলবে না এক্ষেত্রে। কাজ করতে হবে নাছোড়বান্দার মতো।
কোনো ধাপ অতিক্রম করতে একটি উপায় একবার অবলম্বন করুন। সফল না হলে নতুন উপায় বের করে আবার চেষ্টা করুন। সফল হওয়ার আগে কাজটি ছেড়ে দেয়া চলবে না।
প্রবন্ধের প্রথমাংশে যে বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছি- তা সব সফল উদ্যোক্তারই থাকে। আপনিও সামনের দিকে তাকান। আপনাকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, তা নির্দিষ্ট করুন। নিজের সামর্থ, শক্তি ও দক্ষতার ওপর আস্থা রাখুন। নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যান। কোনোভাবেই পিছিয়ে যাবেন না। প্রচেষ্টা ছেড়ে দিবেন না। আর তা যদি করতে পারেন, তবে অর্ধেক পথ পৌঁছে গেছেন -এ কথা মনে করতেই পারেন আপনি।
লেখক :
সম্পাদক, ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স
thanks a lot to writer.