অভিনন্দন, ২০১১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা!
তোমরা জানো, প্রেসিডেন্ট হওয়াটা আসলে অনেক বড় একটা ব্যাপার। শুধু আমার ব্যবহারের জন্য একটা আস্ত বিমান আছে, আমার নিজের জন্য একটা থিম সং আছে! কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা ভালো লাগে, সেটা হলো তোমাদের মতো তরুণদের সঙ্গে এমনভাবে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া। অতএব বুঝতেই পারছ, আমি এখানে এসে নিজেকে কতটা সৌভাগ্যবান মনে করছি আজ।
আমরা আজ এখানে দর্শকসারিতে অনেক বড় মাপের অতিথিদের পেয়েছি। টেনেসির গভর্নর বিল হাসলাম রয়েছেন আমাদের মধ্যে। আসুন, সবাই তাঁকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানাই। আমাদের মধ্যে আরও রয়েছেন সিনেটর বব কর্কার, সিনেটর ল্যামার আলেক্সান্ডার এবং সিনেটর স্টিভ কোহেন। এমনকি মেমফিসের নিজের মানুষ সিনেটর হ্যারল্ড ফোর্ড জুনিয়রও রয়েছেন আমাদের মধ্যে। আরও রয়েছেন মেমফিসের মেয়র এ সি হুয়ারটন। তাঁদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আজকের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে।
আজ তোমাদের প্রত্যেককে নিয়ে আমি গর্বিত। কারণ, তোমরা শেষ পর্যন্ত অনেক শ্রম দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছ। এর জন্য ধন্যবাদ জানাতে হবে তোমাদের শিক্ষকদের। তাঁরা সব সময় তোমাদের পড়াশোনা করানোকে তাঁদের চাকরির অংশ হিসেবে নয়, বরং নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে চিন্তা করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দেওয়া উচিত তোমাদের পরিবারকে। তোমাদের বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী—সবার অবদান রয়েছে এতে। কারণ, তাঁরা তোমার ওপর আস্থা রেখেছেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান মানেই হলো আনন্দের উপলক্ষ। কিন্তু আজকের এই সমাবর্তন যেন আরও বেশি আনন্দের। কারণ, আমি জানি, বুকার টি নিয়ে অনেকেই এতটা আশাবাদী ছিলেন না। অনেকেই মনে করত, এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের কড়া প্রতিযোগিতার মধ্যে কখনোই নিজেদের জায়গা করে নিতে পারবে না। কারণ, এই এলাকাটা অনুন্নত, এখানকার রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ভাঙাচোরা। এককথায় এখানকার শিক্ষার্থীরা উন্নত সুযোগ-সুবিধা তেমন পায় না বললেই চলে।
কিন্তু তোমরা প্রমাণ করেছ, তোমাদের প্রত্যেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলেছ, ‘ইয়েস, উই ক্যান’। হ্যাঁ, আমরাও পারি। আমরা শিখতে পারি, আমরাও পারি সফল হতে। কোথা থেকে এসেছ, সেটা নয়; বরং কোথায় যেতে চাও, সেটাই যে তোমাদের আসল পরিচয়, তা প্রমাণ করেছ তোমরাই।
এই তো বছর খানেক আগের কথা। এমন একটা সময় ছিল, যখন এই প্রতিষ্ঠানের মাত্র অর্ধেক শিক্ষার্থীই পড়াশোনা শেষ করতে পারত। অনেক কাল ধরেই এই প্রতিষ্ঠানের মাত্র হাতে গোনা গুটিকয় শিক্ষার্থীই পারত পরবর্তী ধাপে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। কিন্তু আজ তোমরা যে সবকিছু বদলে দিয়েছ!
এই প্রতিষ্ঠানে যারা নতুন পড়তে আসবে, তাদের সামনে এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছ তোমরা। তোমরা এমন একটা ধারা তৈরি করতে পেরেছ, যা কি না পরিশ্রমীদের সাফল্য নিশ্চিত করে। এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থীর ওপর শিক্ষকেরা আস্থা রেখেছেন। এবং তারই ফলে আজ তোমাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই তাদের পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পেরেছে সুন্দরভাবে। এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, তাদের অনেকেই এখন তাদের নিজের পরিবারের সবচেয়ে শিক্ষিত মানুষ।
আমি আজ এখানে এসেছি, কারণ আমি মনে করি, এমন সাফল্য যদি বুকার টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা পেতে পারে, তবে সেই সাফল্য মেমফিস এলাকাও অর্জন করতে পারে; এই সাফল্য যদি মেমফিস এলাকায় সম্ভব হয়, তাহলে তা সম্ভব হবে পুরো টেনেসি রাজ্যেও; আর টেনেসি রাজ্য যদি তা পারে, তাহলে পুরো যুক্তরাষ্ট্রও পারবে সফল হতে।
তবে এর জন্য আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রতিটি মানুষই তার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতার সঠিক প্রয়োগ করতে পারে। আমরা ‘রেস টু টপ’ প্রকল্প চালু করেছি এ জন্যই, যেন আমরা বুকার টির মতো সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পাওয়া সাফল্যের জন্য উপযুক্ত সম্মান দিতে পারি।
আজ আমি তোমাদের সামনে এমনি এমনিই এসে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি, তা কিন্তু নয়। আজ আমি এখানে তোমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছি, তার কারণ হলো আমার শিক্ষা। আমার যখন বয়স মাত্র দুই বছর, তখন আমার বাবা আমাদের রেখে চলে যান। আমার অসহায় মা আমাকে আর আমার বোনকে নিয়ে অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন সেই সময়। কিন্তু একটা বিষয়ে আমার মা, আমার নানা-নানি কখনো ছাড় দেননি আমাকে। সেটা হলো পড়াশোনা। তাঁরা সব সময় আমার পেছনে লেগে থাকতেন। আমার কোনো অজুহাত দেওয়ার উপায় ছিল না। আমার শিক্ষকেরাও আমার পেছনে অবিরত লেগে থাকতেন পড়াশোনার জন্য। আমার সৌভাগ্য, তাঁরা কখনো আমাকে পড়াশোনার জন্য তাগাদা দেওয়া থামাননি। ঠিক এমনটাই ঘটেছিল আমার স্ত্রী মিশেলের বেলায়ও। তার মা-বাবাও সব সময় তার পেছনে লেগে থাকতেন পড়াশোনার জন্য।
একটা কথা বলে রাখি, দেশের সাফল্যের জন্য তোমাদের মধ্যে কয়েকজন ভালো করলেই হবে না, তোমাদের সবাই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই সম্ভব হবে দেশের উন্নতি। শিক্ষার মাধ্যমে তোমরা সব ধরনের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবে। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় আমরা সব সময় আমাদের শিক্ষকদের প্রশ্ন করতাম, এসব ‘আলজেব্রা’ শিখে আমাদের কী লাভ? হ্যাঁ, এটা অবশ্যই সত্য যে কর্মজীবনে গিয়ে তোমাদের এক্স অথবা ওয়াইয়ের মান বের করতে হবে না। কিন্তু এসব অঙ্ক করার মাধ্যমে আসলে তোমাদের মস্তিষ্কের সব জট খুলে যাচ্ছে। এসব গণিতের সমস্যা সমাধান করে তোমরা সব ধরনের পরিস্থিতিতে বিভিন্ন তথ্য, সমস্যা ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে সমাধান করা শিখছ। অঙ্কের শিক্ষকদের বলি, আপনারা আপনাদের শিক্ষার্থীদের বলবেন, প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সবাইকে ভালোভাবে গণিত শিখতে হবে।
তোমাদের সবার নিজের নিজের গল্প আছে। অনেকেই অনেক কষ্ট করে এসেছ। দক্ষিণ মেমফিস অঞ্চল সব সময় ছিল অনুন্নত। এখানকার অধিবাসীরা হাত বাড়ালেই সবকিছু পেয়েছে, এমনটা কখনোই হয়নি। তোমরা যা চেয়েছ, তা চাওয়ামাত্র পেয়েছ, এটাও হয়নি কোনো দিন। কিন্তু এতে কষ্ট পাওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং এটা গর্বের ব্যাপার। কারণ, তোমরা যা কিছু পেয়েছ, যত লক্ষ্য অতিক্রম করেছ, যত সাফল্য অর্জন করেছ, যত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ, তার সবই তোমাদের নিজের, একেবারে নিজেদের কৃতিত্ব, নিজেদের পরিশ্রমের ফসল। এসব কারও অনুগ্রহের ফসল নয়।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা, একটা কথা মনে রাখবে, আজ তোমাদের যাত্রা শেষ হলো তা নয়, আরও অনেক পথ বাকি রয়েছে। যাত্রা কেবল শুরু হলো। পথের প্রতিটি বাঁকেই নিজেকে ভালো, আরও ভালো করার জন্য তাগাদা দেওয়াটা কখনোই থামাবে না। সামনের দিনগুলোতে তোমরা কতটা সফল হবে, তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না; কিন্তু একটা কথা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, চলার পথে অনেক ভুল করবে তোমরা। অনেক কঠিন সময় আসবে। হয়তো হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু তোমরা যদি সব সময় নিজেকে তাগাদা দিতে থাকো, তাহলে সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে নিজেই। আজ তোমরা যদি এই সংকল্প করো যে সব সময় ভালো কিছু করার জন্য নিজেকে তাগাদা দিতেই থাকবে, তাহলে আমি তোমাদের ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলতে পারি, যে শিক্ষা, ভালোবাসা, সাফল্য তোমরা বুকার টি স্কুল থেকে পেয়েছ, তা দিয়েই সারা বিশ্বে নিজেদের চিহ্ন এঁকে দিতে পারবে তোমরা।
ধন্যবাদ সবাইকে। ধন্যবাদ তোমাদের নিজের আত্মবিশ্বাস আমার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ঈশ্বর তোমাদের সহায় হোন।
সূত্র: ওয়েবসাইট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত। অনুবাদ: ফয়সাল হাসান
সূত্র : প্রথম আলো | বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১২