ইকবাল বাহার জাহিদ : নিজেকে অন্য উচ্চতায় এগিয়ে নিতে হলে আপনার কিছু সফট স্কিল থাকতেই হবে। এই নিবন্ধে আপনাদের জানাবো ৭টি গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল সম্পর্কে।
৭টি সফট স্কিল আপনার থাকতেই হবে
১। কমিউনিকেশন স্কিলস
আপনি যেখানেই কথা বলেন না কেন, আপনি কী বলতে চাইছেন সেটা স্পষ্ট করে বলা, কোন টোনে বলছেন, কথা বলার সময় আপনার বডি ল্যাংগুয়েজ কেমন হচ্ছে, সময়টা ঠিক আছে কি-না – এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যখন কোনো কিছু নিয়ে কথা বলবেন, সে বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য, তা নিজের কাছে যেন পরিষ্কার থাকে। অনেকে খুব তাড়াতাড়ি কথা বলেন। আবার কারো কণ্ঠস্বর এমনই যে কথা বোঝাই যায় না। ভার্বাল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে খুব স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে, যাতে অন্যরা বুঝতে পারেন।
২। লেখার দক্ষতা
যা ভাবছেন, তা স্পষ্ট করে ভাষায় প্রকাশ করাও একটা দক্ষতা। তাই যা লিখতে হবে, তা প্রজেক্ট রিপোর্টই হোক অথবা বিজনেস প্রোফাইল বা ক্লাস নোট্স, সব কিছুতেই যেন একটা পরিচ্ছন্নতা থাকে। বিশেষত, চাকরিতে বা বিজনেসে যদি সহকর্মীর জন্য কোনও মেমো বা বসের জন্যে কোনো রিপোর্ট তৈরি করতে হয়, তা হলে বুঝতে হবে, কী লিখতে হবে, কতটা লিখতে হবে। কম কথায় সোজাসাপটা কোনো কিছু গুছিয়ে লেখার অভ্যাস করুন। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে লেখায় গ্রামার, পাংচুয়েশন ও বানান যেন ঠিক থাকে।
৩। শোনার দক্ষতা
এটাও একটা বিরাট দক্ষতা। যে কোনো জায়গাতেই যিনি অন্যের কথা মন দিয়ে শোনেন, অর্থাৎ যে ‘গুড লিসনার’, তার বা তাদের গুরুত্ব অন্য রকম। তাদেরকে কিন্তু প্রোডাকটিভ ওয়ার্কার হিসেবে দেখা হয়। কারণ আপনি যদি চট করে কোনো কথা শুনে বুঝে যান আপনার কাছ থেকে কী চাওয়া হচ্ছে, তা হলে আপনারই কাজের সুবিধে। এতে বসের নেকনজরে পড়বেন, সহকর্মীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক তৈরি হবে।
ব্যক্তিগত জীবনেও এই অভ্যাস তৈরি করতে পারলে, জীবনে নানান সিদ্ধান্ত নেওয়া ও মানুষকে বুঝতে অনেক সুবিধা হয়। তবে সবাই যে গুড লিসনার হন তা নয়। আবার অনেক সময় যাঁদের মনে করা হয় গুড লিসনার, তাঁরাও এমন আচরণ করেন, দেখে মনে হবে তিনি কোনও মনোযোগই দিচ্ছেন না। যাঁরা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনেন তাঁরা দেখবেন কয়েকটা জিনিস করেন। যেমন, চোখে চোখ রেখে কথা বলা। অন্য ব্যক্তি যখন কথা বলেন, তখন তাঁর কথার মধ্যে কথা না বলা। অযথা উসখুস না করা। কথার মাঝে মাথা নাড়া। বক্তার দিকে সামান্য ঝুঁকে বসা। বক্তার কথা শেষ হয়ে গেলে তবেই প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা।
৪। অর্গানাইজেশনাল স্কিল্স
কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা খুব গুছিয়ে কাজ করতে পারেন। এ ধরনের স্কিল যাঁদের থাকে, তাঁরা দেখবেন কোনো হুড়োহুড়ি না করেই যে কোনো কাজ করে ফেলতে পারেন। একাধিক অ্যাসাইনমেন্ট খুব স্বচ্ছন্দে করে ফেলতে পারেন এবং তাদের কাজে ভুলও থাকে নামমাত্র। আমরা অনেকেই গুছিয়ে কাজ করতে পারি না। কিন্তু কয়েকটা জিনিস করলেই এই অভ্যাস তৈরি করে ফেলা যায়।
প্রথমে কাজের একটা তালিকা তৈরি করা। এবার কোন কাজটা বেশি গুরুত্বের আর কোনটা কম গুরুত্বের, তা ভাগ করে নেয়া। যে কাজ শেষ করছেন, টিক মারতে থাকুন। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট বা হাতে লেখার নোটবুক— যেটাতে আপনার সুবিধা, এই তালিকা বানিয়ে রাখুন। প্রত্যেকটা কাজের জন্য একটা ডেডলাইন করে রাখুন ক্যালেন্ডারে। দরকারে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখুন। একটা রুটিন ফলো করুন।
৫। থিংকিং স্কিলস
অন্যে যা ভাবছে, সেটাকেই সহজে গ্রহণ করবেন না। নিজের ভাবনা-চিন্তা-কল্পনার ওপর জোর দিবেন। এখন চাকরির বা ব্যবসার ক্ষেত্রে যা প্রতিযোগিতা, তাতে নিজের কাজে যে যত সৃষ্টিশীল হতে পারবে, সে তত এগিয়ে যাবে। সমস্যা হলে অধিকাংশ মানুষ সেটা নিয়েই মেতে যায়। কিন্তু যে সমস্যা সমাধান করে, সে-ই লিডার হয়। ফলে ঠাণ্ডা মাথায়, যুক্তি দিয়ে পরিস্থিতির বিচার করে, সমাধানের পথ খোঁজাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একটা বড় দক্ষতা। একটা পরিস্থিতি কী চাইছে, সেটা বুঝে নিয়ে এবং সেই পরিস্থিতির কী কী সমাধান হতে পারে, সেটা ভেবে আপনার যা ঠিক মনে হবে, সেই অনুযায়ী একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেকেই নানা রকম পথ বাতলাতে পারে, কিন্তু কোনো একটা পথ চিহ্নিত করতে বললে, দ্বিধায় পড়ে যান। সেটা কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা খুব বড় গুণ।
৬। প্রফেশনালিজম
কাজের ক্ষেত্রে এই শব্দটার গুরুত্ব যথেষ্ট। এর কারণে কাজের জায়গায় আপনার অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। এ জন্য কয়েকটা জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। উদাহরণ দেওয়া যাক। কাজের জায়গায় কিংবা মিটিং-এ দেরিতে পৌঁছানো একেবারেই নয়। এতে ধারণা হয়, আপনি কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
একই নিয়ম খাটে লাঞ্চে যাওয়ার সময়েও। খেতে গিয়ে আড্ডায় অনেক ক্ষণ কাটিয়ে দিলেন, এমনটা না করাই ভালো। বাড়িতে বা অন্য কোথাও ঝামেলার কারণে যদি মুড খারাপ হয়ে যায়, সেটা কাজের জায়গায় অঅনবেন না। জামাকাপড়ের দিকে নজর দিতে হবে। ফর্মাল বা ক্যাজুয়াল, সেটা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। সাধারণত উইকডেজ-এ ফর্মাল পরবেন। আর, উইকেন্ডে ক্যাজুয়াল। অনেকের অভ্যাস থাকে সহকর্মীদের সঙ্গে পরচর্চা করার। অফিসে এ সব না করাই ভালো।
কোনো ভুল করলে সেটা নিজের ঘাড়ে নিন। অজুহাত দিয়ে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। ভুল থেকে শিক্ষা নিন। হতেই পারে কোনো একটা বিষয়ে আপনার এক রকম মত, আপনার সহকর্মী বা বসের অন্য রকম। যদি তিনি আপনার মতামত গ্রহণ না করে নিজের মতটাই খাটাতে চান, অযথা রেগে যাবেন না বা চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন না। তাঁকে বোঝাবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, আপনি কোন দিক থেকে বিষয়টা দেখেছন। তার পরেও তিনি যদি রাজি না হন, বিষয়টা নিয়ে আর না এগুনোই ভালো।
৭। পিপল স্কিলস
কাজের ক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত জীবনে কেমনভাবে লোকের সঙ্গে মিশছেন, সেটাই অন্যের কাছে আপনার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে দেয়। আপনার ব্যবহার, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, এই সব কিছুই কিন্তু একজন সফল মানুষ হতে খুব প্রয়োজন।
অধিকাংশ মানুষেরই লক্ষ্য থাকে, যেখানে কাজ করছে, সেখানে এক সময় সে নেতৃত্ব দেওয়ার স্তরে পৌঁছবে। এই লিডারশিপ স্কিল তৈরি করতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার। যেমন, দলের মধ্যে একটা মত প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে রাজি করানো একটা বড় ব্যাপার। তার জন্য নিজের চিন্তা এবং অনুভূতিকে ঠিকমত প্রকাশ করতে জানতে হয়। সবাইকে উৎসাহ দিয়ে বুঝিয়ে রাজি করানো এবং নিজের দক্ষতা ও সততার মাধ্যমে অন্যের আস্থা অর্জন করাটাও একটা জরুরি শিক্ষা। টিমওয়ার্ক মানে কিন্তু একটা টিমকে দিয়ে কতটা কাজ করানো গেল তা নয়, একটা টিম নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে কতটা কাজ করল, সেটাই আসল।
এই ৭টি সফট স্কিল থাকলে তা আপনাকে অন্যদের থেকে একটু বেশিই এগিয়ে রাখবে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, নিজের বলার মতো একটি গল্প
লেখকের আরো লেখা : জিপিএ-৫ না পাওয়া হতে পারে জীবনের টার্নিং পয়েন্ট