এস আহমেদ ফাহিম : বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই সংগঠনগুলো বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই ভলান্টিয়ারিং করার সুযোগ থাকে। ছাত্রজীবনে ভলান্টিয়ারিংয়ের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে।
ছাত্রজীবনে ভলান্টিয়ারিং কেন করবেন-
১. ছাত্রজীবনই ভলান্টিয়ারিং করার উপযুক্ত সময়। লেখাপড়া শেষ করে যখন আমরা ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন ইচ্ছে করলেও অনেক কিছুতে সময় দেয়া যায় না। ছাত্রজীবনে দায়িত্ব কিছুটা কম থাকে, অর্থনৈতিক চিন্তাও কম থাকে, নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ থাকে। এজন্য ছাত্রজীবনেই ভলান্টিয়ারিং করা উচিৎ।
২. চাকরিতে আবেদন করতে গিয়ে সাধারণ সমস্যার মধ্যে একটি হলো বেশির ভাগ চাকরিতেই পূর্ব অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। একদম নতুনদের জন্য চাকরির সুযোগ খুবই কম থাকে। এক্সপেরিয়েন্স না থাকার জন্য অনেক জায়গায় আবেদন পর্যন্ত করা যায় না।
ক্যারিয়ার রিলেটেড ক্ষেত্রে ভলান্টিয়ারিং করার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তবে অন্য ক্যারিয়ার রিলেটেড ভলান্টিয়ারিং না করলেও সমস্যা নেই। যেকোনো ধরনের ভলান্টিয়ারিং-ই সিভিতে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি হিসেবে যোগ হবে। সামাজিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে ভলান্টিয়ারিং এর অভিজ্ঞতা থাকলে তা যেকোনো চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয়।
৩. ভলান্টিয়ারিং করার সময় কাজের চাপ অত বেশি থাকে না, পরিবেশও থাকে বন্ধুসুলভ। ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে নেটওয়ার্কিং করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে যোগাযোগের সুযোগ থাকে। প্রায় সবাই ভলান্টিয়ারদের বেশ গুরুত্ব দেন। নিজের কাজটা ঠিকমত গুছিয়ে করতে পারলে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষের চোখে পড়াটাও সহজ। তাই ভলান্টিয়ারিং কোনো চাপ ছাড়াই নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেবে।
৪. ভলান্টিয়ারিং ক্যারিয়ার গোল সেট করতে সাহায্য করবে। ক্যারিয়ার ও ক্যারিয়ার রিলেটেড জবে কাজ করতে গেলে তা ভলান্টিয়ারিং করার মাধ্যমে শেখা সম্ভব। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর মাধ্যমে ভলান্টিয়ারিং রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স পেতে সাহায্য করবে।
৫. ভলান্টিয়ারিং নতুন নতুন স্কিল ডেভেলপ করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই স্কিল যে কেউ প্রফেশনালি ডেভেলপ করতে পারবে। শুধু ক্যারিয়ার গড়তে বা চাকরি করতেই নয়- ভলান্টিয়ারিং ব্যক্তিগত জীবনেও বিভিন্ন ধরনের স্কিল ডেভেলপ করে। এটি করতে গিয়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট শেখা যায়। অনেক ধরনের পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করারও অভিজ্ঞতা হয়।
৬. ভলান্টিয়ারিংয়ের এক্সপেরিয়েন্স থাকলে চাকরিতে আবেদন করার সময় আত্মবিশ্বাস কাজ করে। এর একটা অন্যতম সুবিধা হল, বার্ডস আই ভিউ থেকে সমস্ত কিছু একবারে দেখা যায়। এছাড়া ভলান্টিয়ারিং করতে গেলে সব ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কেই কিছু না কিছু ধারণা নেয়া যায়। শুধু তাই নয়, এটি ব্যক্তিগত জীবনেও আত্মবিশ্বাসী করে তুলে। ঠিক সময়ে কাজ শেষ করা, বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করা, বিভিন্ন মানুষকে হ্যান্ডেল করা, ইভেন্ট পরিচালনা করা জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। এছাড়াও নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে শেখা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, নতুনভাবে পৃথিবীকে আবিষ্কার করতে শেখাটাও ভলান্টিয়ারিংয়ের অবদান।
৭. আমাদের অনেকেরই একাডেমিক লেখাপড়ার সাথে সখের তেমন মিল থাকে না। কিন্তু ভলান্টিয়ারিং ইচ্ছাকে পরিপূর্ণতা দেবে। এটি করতে গিয়ে একাডেমিক লেখাপড়ার সাথে সখকে সমন্বয় করা সম্ভব । সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলাতে চাওয়ার জন্য ভলান্টিয়ারিং সাহায্য করে।
৮. ভলান্টিয়ারিং মানুষের মধ্যে সোশ্যাল ও রিলেশনশিপ স্কিল বাড়িয়ে তোলে। ভলান্টিয়ারিং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর সাথে সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলো কীভাবে মেনে চলতে হয়, সব মানুষের সাথে কীভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয় এই ব্যাপারগুলোর শিক্ষা দেয়। তাই ছাত্রজীবনই এই স্কিলগুলো বাড়িয়ে নেওয়ার উপযুক্ত সময়।
৯. লেখাপড়া বা চাকরি জীবনের সব ক্ষেত্রেই চান্স পাওয়ার জন্য অনেক ধরনের রিকোয়ারমেন্ট লাগে। কিন্তু ভলান্টিয়ারিংয়ে ইচ্ছা ও ইতিবাচকতাই একমাত্র রিকোয়ারমেন্ট। ভলান্টিয়ারিং করতে চাইলে আর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। না কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা!
১০. ভলান্টিয়ারিং আমাদের ইচ্ছার গণ্ডি ভাঙতে সাহায্য করে। এটি করতে গিয়ে আমাদের অনেক ধরনের নতুন নতুন কাজ করতে হয়, যেটা আমরা আগে কখনো করিনি। অথচ বাস্তব জীবনে সাফল্যের জন্য এই কাজগুলো অনেক সময় করাটা আবশ্যক হতে পারে, তখন ভলান্টিয়ারিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতাটা বেশ কাজে লাগবে। ছাত্রজীবনই কমফোর্ট জোন ভেঙে কাজ করতে শেখার উপযুক্ত সময়। ভলান্টিয়ারিং এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১১. ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে আমাদেরকে অনেক সময় প্রচুর মানুষের মাঝে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হয়। যা অনেক সময় নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও কাজে লাগে। শুধু তাই নয়, এই সচেতনতা আমরা আমাদের পরিবারেও ছড়িয়ে দিতে পারি। তাই ভলান্টিয়ারিং শুধু সামাজিক গোষ্ঠী নয়, ব্যক্তিগত সচেতনতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
১২. ছাত্রজীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হতাশ হয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ভলান্টিয়ারিং করতে গিয়ে ব্যস্ততা, বিভিন্ন ধরনের কাজ, বিভিন্ন মানুষের সাথে মেশার কারণে হতাশ হওয়ার সুযোগই পাওয়া যায় না। এছাড়াও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভলান্টিয়ারিংয়ের মূল উদ্দেশ্যই থাকে শুধু মানব সেবা। যা আমাদের সুখী জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।