কামরুন নাহার ঊষা : মুখরোচক খাবারের মধ্যে মিষ্টি অন্যতম। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার মধ্যে এটি বেশ বড় স্থানজুড়ে রয়েছে সেই প্রাচীন যুগ থেকে। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যুর দোয়া- নানা অনুষ্ঠানে মিষ্টির ব্যবহার চোখে পড়ে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিষ্টির ব্যবহার বাড়ছে বৈ কমছে না। মিষ্টি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। উৎসবের দিনে বাঙালির ঘরে মিষ্টির কদর অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশিই থাকে। মিষ্টি নিয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বিধিনিষেধ থাকলেও তাদের জন্য নতুন প্রযুক্তিতে মিষ্টি তৈরি করা হচ্ছে। অর্থাৎ মিষ্টির স্বাদ চাখতে পারেন প্রায় সবাই। বাংলাদেশে অনেক ব্যবসায়ী মিষ্টি ও মিষ্টান্ন ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত। তাই মিষ্টির চাহিদা অধিকতর বলাই যায়। সুতরাং মিষ্টির ব্যবসায় শুরু করে লাভবান হতে পারেন আপনিও।
কিভাবে শুরু করবেন মিষ্টির ব্যবসায়
মিষ্টির ব্যবসায় আপনি দুইভাবে করতে পারেন। পাইকারি দরে কিনে বিক্রি করে অথবা নিজেই কারখানায় মিষ্টি উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন। নিজে উৎপাদন করে বিক্রি করাটাই উত্তম। শুধু দোকান দিয়ে শুরু করতে চান? তবে নানা ধরণের ঝুঁকি থেকে যায়। প্রথম ঝুঁকিটি হচ্ছে বাইরে থেকে কিনে আনা মিষ্টির মান কেমন হবে, তা অনিশ্চিত। আর মান ভালো না হলে ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। সেদিক থেকে মিষ্টি উৎপাদন করে বিক্রি করলে যেমন মিষ্টির মান নিশ্চিত করতে পারবেন, তেমনি ব্যবসায় সফল হবেন।
মিষ্টি উৎপাদন করতে আহামরি ধরনের পুঁজির প্রয়োজন পড়ে না। এজন্য কিছু কাঁচামাল কিনতে হবে। তবে মিষ্টি উৎপাদনের জন্য এটি বানানোর নিয়ম ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান মিষ্টি বানানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসব জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করা যেতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অধীনে ৬ মাসের কোর্স করে নিতে পারেন। কারখানায় দুই থেকে তিনজন লোক ও মিষ্টির দোকানে একজন কর্মচারী হলেই যথেষ্ট। শহরে মিষ্টির দোকান ভাড়া নিলে প্রথমে ছোট দেখেই নিন। পরবর্তী সময়ে লাভের টাকা দিয়ে কর্মচারী ও দোকানের পরিধি বাড়াতে পারেন।
যা প্রয়োজন
মিষ্টি তৈরিতে খাঁটি দুধ, চিনি, ময়দা প্রভৃতি কাঁচামাল প্রয়োজন।
কোন ধরনের মিষ্টি তৈরি করবেন
বাংলাদেশে মিষ্টির কয়েকটি বড় ব্র্যান্ড রয়েছে। যেমন রস, মরণচাঁদ, বিক্রমপুর, ভাগ্যকুল, ফুলকলি, বনফুল, মিঠাই, মুসলিম সুইটস প্রভৃতি। ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে রংপুরের হাবসি হালুয়া, রাজশাহীর রসকদম্ব, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কালো তিল কদম্ব, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, পাবনার ইলিশপেটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, যশোরের জামতলার রসগোল্লা ও চমচম, খুলনার মিহিদানা লাড্ডু, রাজবাড়ীর চমচম, ফরিদপুরের মালাইসর প্রভৃতি মিষ্টি তৈরি করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, আপনার মিষ্টি যেন অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা স্বাদের হয়। নকশাঁর মধ্যেও ভিন্নতা আনার চেষ্টা করবেন।
জুস ব্যবসায়ে ভাগ্য পরিবর্তন
প্যাকিং
বর্তমানে মিষ্টির প্যাকিং বেশ উন্নতমানের। বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে বাহারি মিষ্টির প্যাকেট ব্যবহার করে ক্রেতাকে আকর্ষণ করে থাকেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো দোকানে প্যাকিংগুলো এখন বাঁশের ও বেত দিয়েও তৈরি করা হয়। নানা নকশাঁয় তৈরি বাঁশ-বেতের তৈরি প্যাকিং আপনিও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী মাটির হাঁড়িও এখন মিষ্টির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
মুনাফা
সঠিক পদ্ধতিতে এ ব্যবসা শুরু করতে পারলে আপনি লাভবান হতে পারবেন। ভালোভাবে বিক্রি করতে পারলে প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মুনাফা করা যায় অনায়াসেই। দোকানে মিষ্টির পাশাপাশি কফি ও চায়ের ব্যবস্থাও করতে পারেন।
সাবধানতা
মিষ্টির ব্যবসায় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কাঁচামাল থেকে শুরু করে উৎপাদন, বাজারজাতকরণের সব পর্যায়ে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর প্রধান কাঁচামাল সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের পর ব্যবহার করতে হবে। উৎপাদন ও সংরক্ষণে দক্ষ লোকের ব্যবস্থা করতে হবে।