শিক্ষার্থীদের আচরণিক দক্ষতা কী? কীভাবে শেখাবেন?

শিক্ষার্থীদের আচরণিক দক্ষতা কী? কীভাবে শেখাবেন?

আচরণিক দক্ষতা বলতে এমন ধরনের দক্ষতাকে বোঝায়, যা একজন ব্যক্তির আচরণ, মানসিকতা এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এটি মূলত শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের সামগ্রিক আচরণের একটি প্রতিফলন।
এই দক্ষতাগুলো একজন ব্যক্তির অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ধরন, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, এবং মানসিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলে।

আচরণিক দক্ষতা সাধারণত ব্যক্তি কীভাবে তার আবেগ, মনোভাব ও মূল্যবোধকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অন্যদের সঙ্গে কার্যকরী সম্পর্ক গড়ে তোলে, তার ভিত্তিতে তৈরি হয়। এসব দক্ষতা কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা, ব্যক্তিগত জীবন সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।

আচরণিক দক্ষতাসমূহ

আচরণিক দক্ষতা আসলে কিছু সফট স্কিলের সমষ্টি। আচরণিক দক্ষতার মধ্যে যেসব দক্ষতা রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-

যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills):
স্পষ্টভাবে কথা বলা, লেখার এবং শোনার ক্ষমতা।

এটি শিক্ষার্থীদের দলগত কাজ, উপস্থাপনা এবং ক্লাসে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে শেখানো যায়। বিতর্ক, গ্রুপ ডিসকাশন বা পাবলিক স্পিকিং ক্লাসও সহায়ক হতে পারে।

সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা (Problem-Solving Skills):
শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধানের পদ্ধতি খুঁজে বের করতে শেখানো।

বাস্তব জীবনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা, প্রজেক্ট বেসড লার্নিং বা মজার পাজল সমাধান করার মাধ্যমে এটি শেখানো সম্ভব।

টিমওয়ার্ক (Teamwork):
অন্যদের সঙ্গে কাজ করার দক্ষতা এবং দলগত সাফল্যে অবদান রাখা।

দলীয় কাজ বা গ্রুপ প্রজেক্ট, স্পোর্টস, এবং ক্লাসের বাইরে গ্রুপ অ্যাক্টিভিটিস এই দক্ষতা তৈরিতে সহায়ক।

সময় ব্যবস্থাপনা (Time Management):
সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং অগ্রাধিকার নির্ধারণের দক্ষতা।

প্রজেক্টের সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং ডেডলাইন মেনে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা এর অন্যতম উপায়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সময়সূচি তৈরির কৌশল শেখানো যেতে পারে।

আত্মবিশ্বাস (Self-Confidence):
নিজের যোগ্যতা এবং কাজের প্রতি আস্থা থাকা।

শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট অর্জনে প্রশংসা করা, উপস্থাপনার সুযোগ দেওয়া এবং নেতিবাচক পরিস্থিতি সামলাতে শেখানো এর উন্নতি ঘটাতে পারে।

মানসিক স্থিতি (Emotional Resilience):
চ্যালেঞ্জ, ব্যর্থতা এবং চাপ সামলাতে পারা।

শিক্ষার্থীদের মননশীলতা (mindfulness) শেখানো, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা শেখানো এবং ব্যর্থতার পর নতুন করে শুরু করার পদ্ধতি শেখানো যেতে পারে।

সমালোচনামূলক চিন্তা (Critical Thinking):
যুক্তিপূর্ণ চিন্তা করা এবং বিভিন্ন ধারণা ও তথ্যকে যাচাই করতে পারা।

বিতর্ক, ক্রিয়েটিভ লিখন, বা ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ক্লাসের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটি শেখানো সম্ভব।

কিভাবে শেখানো সম্ভব?

  • প্রাকটিক্যাল প্রজেক্টস এবং অ্যাক্টিভ লার্নিং: শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যা সমাধান করার সুযোগ দেওয়া বা প্রজেক্টভিত্তিক শিক্ষাদান সফট স্কিল গড়ে তোলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর একটি। এভাবে তারা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।
  • রোল-প্লে এবং সিমুলেশন: বিভিন্ন পরিস্থিতির মডেল তৈরি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নেতৃত্বের কৌশল তৈরি করা সম্ভব।
  • পাঠ্যক্রমের বাইরের কার্যক্রম (Extracurricular Activities): খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ড্রামা ক্লাব, বিতর্ক, ভলান্টিয়ারিং প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের টিমওয়ার্ক, যোগাযোগ এবং নেতৃত্বের দক্ষতা শিখতে সহায়ক হতে পারে।
  • রেগুলার ফিডব্যাক: শিক্ষার্থীদের কাজের ওপর নিয়মিত গঠনমূলক ফিডব্যাক দেওয়া এবং তাদের উন্নতির জন্য পরামর্শ দেওয়া উচিত। এতে তারা নিজেদের দুর্বলতা এবং শক্তি চিহ্নিত করতে পারবে।
  • মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম: সিনিয়র শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের মেন্টরশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন, সমস্যা সমাধান এবং নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করা সম্ভব।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে সফট স্কিল বিকাশে এই ধরনের কর্মসূচি ও কৌশলগুলো স্কুলে প্রয়োগ করা গেলে, তারা ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনে আরও দক্ষ ও সফল হয়ে উঠতে পারবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top