ওয়াজেদুর রহমান ওয়াজেদ : সবাই লেখালেখি করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না। কিন্তু তাই বলে লেখালেখি করা যাবে না এমন নয়৷ কেননা, পৃথিবীতে অসম্ভব ব্যাপারগুলো বরাবরই সম্ভব হয়ে আসছে। আর, নিয়মিত অনুশীলনই একটা মানুষকে দক্ষভাবে গড়ে তোলে। তাই লেখালেখির পেছনে সময় দিতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলনের মাঝেই লেখালেখির ক্ষেত্রে নিজের দুর্বলতাগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। লেখালেখি করার জন্যে কতগুলো নিয়মকানুন আছে, যেগুলো ব্যবহারে লেখালেখিতে দক্ষতা যে কেউই অর্জন করতে পারে। লেখালেখির জন্যে দরকার মনের স্বচ্ছতা। একটা ভালো লেখা হচ্ছে একগুচ্ছ শব্দের একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থাপনা। একজন অভিজ্ঞ লেখকের পক্ষেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ও অর্থবহ রচনা লেখা সম্ভব। এই আর্টিকেলটিতে লেখালেখির জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি টিপস নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১. চিন্তামুক্ত
স্বচ্ছন্দে একটা লেখা তৈরি করার পক্ষে সবচাইতে বড় অন্তরায় হচ্ছে বিহ্বলতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব। এই জন্য আপনাকে অন্যসব কিছু হতে নিশ্চিন্ত ও মুক্ত এবং সৃজনশীল চিন্তায় মগ্ন থাকতে হবে। যে বিষয়টা নিয়ে লিখতে চান সেটার ওপরই নিশ্চিন্ত মনে ফোকাস করুন এবং লেখার চেষ্টা করুন। আর সবসময়ই লেখার জন্য নীরব আর শান্ত জায়গা বেছে নিন। কেননা, কোলাহলপূর্ণ জায়গা আপনার ভাবনাকে বিক্ষিপ্ত করে দেবে। বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যে আপনি লেখালেখির সাথে আপস করার একটা ঝুঁকিও থেকে যায়। তাই শান্ত পরিবেশ আপনার মনকে শান্ত রাখবে এবং লেখাতে সাহায্য করবে।
২. কল্পনা
বুদ্ধিমত্তার আত্মা বলা যায় কল্পনাকে এবং এটা লেখালেখির একটা পূর্ণাঙ্গ আর অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন কল্পনাপ্রিয় মানুষ একজন ভালো লেখকের অন্যতম উদাহরণ৷ লেখালেখিটা আসলে লেখকের চিন্তাভাবনাটাকে উপস্থাপন করে। যখন চিন্তাভাবনাটা সৃজনশীলভাবেই বর্ণিত হয় তখন সেটা পাঠককে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। কল্পনাশক্তি লেখালেখির জন্যে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান। কেননা এটা লেখককে একইসাথে উদ্ভাবনী ও নিত্যনতুন চিন্তাভাবনার খোরাক জোগায়। আর যখন এই চিন্তাভাবনাগুলো লেখার মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় তখন লেখাটা পাঠকের উপর দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। যদিও আমরা প্রত্যেকটা মানুষই কমবেশী কল্পনাপ্রিয়; তবুও বই, বিভিন্ন আর্টিকেল, ডকুমেন্টারি, মুভি ইত্যাদি দেখেও কল্পনাপ্রবণতা বাড়ানো যেতে পারে। আর অবশ্যই মনে রাখবেন পাঠকেরা কল্পনাপ্রবণ লেখাই সবচাইতে বেশি পছন্দ করেন। কেননা এই লেখায় না আছে রুক্ষতা আর না থাকে একঘেয়েমিতা।
৩. সময়জ্ঞান
সময়জ্ঞানটা সাফল্যতার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। জীবনযাপনে ব্যস্ত আপনার সময় থেকে কিছুটা সময় বের করুন এবং তা লেখালেখিতে ব্যয় করুন। কেননা, লেখালেখিতে দক্ষ হতে চাইলে চাই সময় এবং অনুশীলন। আপনি যদি ভেবে থাকেন লেখালেখিতে রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করবেন কিংবা এক রাতেই অনেক অনুশীলন করে ফেলবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে প্রতিনিয়ত অনুশীলনে রত থাকতে হবে। এতে করে লেখালেখির অভ্যাসটা তৈরির পাশাপাশি দক্ষতাও অর্জিত হবে ধীরে ধীরে। সময়জ্ঞানটা অধিক গুরুত্বের বিষয়, একদিকে আপনাকে শেখার জন্যে যেমন সঙ্কল্পবদ্ধ থাকতে হবে, ঠিক তেমনি লেখালেখির দুনিয়ার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। মনে রাখবেন প্রতিনিয়ত অনুশীলনই আপনাকে ভবিষ্যতের একজন সফল লেখক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
৪. তুলনা
প্রতিদিন আপনার নিজের লেখার সাথে গতদিনের কিংবা আগের লেখার তুলনা করতে পারেন। এতে করে আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারবেন আপনার হাত ঠিক কতটা লেখালেখিতে দক্ষতা অর্জন করেছে। প্রতিদিনের অনুশীলনের লেখাগুলো একত্রে জমা করে রাখুন এবং প্রতিনিয়ত সেগুলো বারবার পড়ে ভুলগুলো খুঁজে বের করুন। যাতে ভবিষ্যতে লেখালেখির সময় একই ভুলগুলো আর না হয়। আপনি চাইলে আপনার লেখাগুলো কোনো অভিজ্ঞ লেখককে দেখাতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি বলে দিতে পারবেন আপনার দুর্বলতা এবং দক্ষতা কোথায় আছে বা নেই। এটা লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা ঠিক কতটুকু দরকার সে সংক্রান্ত একটা ধারণা দেবে।
৫. সহজবোধ্য এবং সংক্ষিপ্ত অথচ অর্থবহ
সহজবোধ্য, অর্থবহ সংক্ষিপ্ত লেখা সবসময়ই পাঠককে আকর্ষিত করে৷ একটা দীর্ঘ ও নিশ্চল লেখা সবসময়ই বিরক্তির উদ্রেক করে। চেষ্টা করুন রচনাশৈলী দারুণ আকর্ষিত করতে, যাতে পাঠক শেষ অবধি লেখায় বুদ থাকে। আপনার লেখার মূল উদ্দেশ্য কিংবা ভাবনা অথবা ধারনাটাকে সহজ আর স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করুন। একের অধিক ধারণা প্রদানের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা রেখে সহজবোধ্যভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরুন। মূল ভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উদাহরণ দেবেন যদি লেখাতে দরকার হয়ে থাকে। কোনোভাবেই অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত কঠিন শব্দ ব্যবহার করে লেখাটাকে নিশ্চল আর দীর্ঘ করে তুলবেন না।
৬. প্রুফরিডিং
সাধারণত লেখকেরা তাদের তুচ্ছ ভুলগুলো সম্পর্কে বেশিরভাগ সময়ই অজ্ঞাত থাকেন। কেননা তারা প্রুফরিডিং খুব কমই করে থাকে। প্রুফরিডিং লেখালেখির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ; এটা আপনার লেখাকে নিখুঁত করে তোলে। প্রুফরিডিংয়ের অন্যতম বড় সুবিধা হচ্ছে- লেখায় অনৈচ্ছিকভাবে থেকে যাওয়া শব্দ বা বাক্যগত ভুল কিংবা শব্দশৈলীর ব্যাপারে দ্বিতীয়বার পূর্ণ মনোযোগ দেয়ার সুযোগ মেলে। তাই ভালোমতো দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন শব্দগত কিংবা বাক্যগত কোনো ভুল আছে কিনা অথবা লেখার ক্রমগুলো ঠিকভাবে সাজানো আছে কিনা।
এই ছয়টি টিপস অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলেও আরো কিছু বিষয়ে আপনাকে প্রস্তত হতে হবে। প্রথমত লেখালেখির মানসিকতা। কেননা লেখালেখির বিষয়টা বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং লেখালেখিটাকে মানুষ বেকারত্বের পর্যায়েই ধরে থাকে। তাই এই বিষয়ে নিজেকে শক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে নিজের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে। ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে শুরু করে সমসাময়িক সব বিষয়েই সাধারণ জ্ঞানটা রাখতে হবে। এ জন্যে গল্প-উপন্যাসের বই, দৈনিক পত্রিকা, টিভির সংবাদ কিংবা ব্লগসাইটগুলোর বিকল্প নেই। আর প্রচুর পরিমাণে পড়া থাকলে শব্দভাণ্ডারও সমৃদ্ধ হয়। নিত্যনতুন শব্দের সাথে পরিচিত না হলে শব্দভাণ্ডার ফুরিয়ে যাবে এবং লেখাটা যাবে নীরস হয়ে। এ তো গেল লেখালেখি সংক্রান্ত বিভিন্ন টিপস। সামনের পর্বে লেখালেখিতে ক্যারিয়ার গড়া যায় এমন ছয়টা দিক নিয়ে আলোচনা করব। ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের সাথেই থাকুন।
সুত্র: ইন্টারনেট
Comments are closed.