চাকরি

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা : যেভাবে নেবেন প্রস্তুতি

আফিয়া খানম রোমা:::::

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (এমসিকিউ) পরীক্ষা অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা পেছানো হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেনি। এবার ১২ হাজার পদের বিপরীতে ২৪ লাখেরও বেশি আবেদন জমা হয়েছে। এ বছর শুধু এমসিকিউতে সীমাবদ্ধ থাকছে না এ পরীক্ষা। এই প্রথমবার যোগ হতে যাচ্ছে লিখিত পরীক্ষা। হাড্ডাহাড্ডি এ লড়াইয়ে আপনার আসন সুনিশ্চিত করতে হলে, নিজেকে রুটিন মাফিক প্রস্তুত করুন। আর হয়ে যান সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা। [সূত্র: সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়]

ইতোমধ্যে হয়তো প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ গাইডটি সংগ্রহ করেছেন। এবার আসুন জেনে নিই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি টিপস।
১. সর্বপ্রথম মনস্থির করুন এই অল্প সময়ে সিলেবাসটি সম্পন্ন করার। সে সাথে নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করুন।
২. প্রাথমিক সহকারী নিয়োগ গাইডটি কেনা হয়ে গেলে, এবার একটি মডেল টেস্ট সংগ্রহ করুন।
৩. পুরনো রুটিন বাদ দিয়ে, আজ থেকে পরীক্ষার আগ পর্যন্ত নতুন রুটিন তৈরি করুন।
৪. সিলেবাসটি বেশ কয়েকবার পড়ুন এবং সেটিকে বিষয় ভিত্তিক আলাদা আলাদা করে একটি সাদা কাগজে লিখে ফেলুন। তারপর সে কাগজটি আপনার পড়ার টেবিলের সামনে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখুন।


৫. সিলেবাসের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে পাশে পেন্সিল দিয়ে লিখে ফেলুন, একদিনে কয়টি টপিক বা বিষয় পড়তে চান বা পড়বেন।
৬. পড়ার রুটিনে প্রতিদিন গণিত ও ইংরেজি রাখুন।
৭. প্রতিদিন পুরনো বছরগুলোর প্রশ্ন সলভ করুন এবং প্রতিদিন এক বা দুটি করে মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন। এছাড়া অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক বা মডেল টেস্ট দিয়ে নিজের মেধা যাচাই করতে পারেন।
৮. যে টপিকটি পড়তে কঠিন বলে মনে হয় এবং ভুলে যাবার আশঙ্কা থাকে, সেটির পাশে রঙিন কলম দিয়ে মার্ক করে রাখুন। তারপর পরীক্ষার ১৫/২০ দিন আগে শুধু মার্ক করা প্রশ্ন বা টপিকগুলো বার বার পড়ুন।
৯. সারাদিনে কত ঘণ্টা পড়েছেন বা আপনার নির্ধারিত টপিকগুলো কতটুকু শেষ করতে পেরেছেন, তা দিন শেষে চেক করুন।
১০. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো- পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন, পড়ার টেবিল গুছিয়ে পড়তে বসুন। মোবাইল ফোন দূরে রাখুন, ঘড়ি ধরে পড়ুন।

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সাধারণত চারটি বিষয়ের ওপর হয়ে থাকে। প্রতিটি বিষয়ে ২০ করে ৮০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার কৃতকার্য হতে হলে চারটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। প্রার্থীর ওপর নির্ভর করে কে, কেমন বা কতটুকু, কোন বিষয় গুরুত্ব দিবে। যেমন : বলা যায় যে, যে প্রার্থী টিউশনি করে থাকে তার জন্য গণিত বিষয়টি অত্যন্ত সহজতর হবে এবং তিনি গণিত বিষয়টি কম পড়লেও চলবে। আবার কারো বা সাধারণ জ্ঞানে দক্ষতা ভালো। অতএব তার কাছে সাধারণ জ্ঞান বিষয়টি সহজ হবে। আপনাকেই বাছাই করে নিতে হবে, আপনি কোন বিষয়টিতে গুরুত্ব বেশি দিবেন। পর্যায়ক্রমে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা হলো। যথা:-

১. বাংলা
সাধারণত বাংলা থেকে ২০ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাংলার জন্য প্রথমেই প্রয়োজনীয় বইগুলো সংগ্রহ করুন। বাংলা জন্য নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ বোর্ড বইটি খুবই জরুরি। এ বই থেকে সিলেবাস অনুযায়ী সন্ধি, কারক, সমাস, শব্দ, এক কথায় প্রকাশ ও বাগধারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তে হবে। একসাথে সব বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, সর্মাথক ও বিপরীত শব্দ পড়া সম্ভব নয়। তাই প্রতিদিন ১৫/২০টা করে পড়তে পারেন। এছাড়া আরো বেশি বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, সর্মাথক ও বিপরীত শব্দ পড়তে বিসিএস প্রিলিমিনারির যেকোনো প্রকাশনীর বাংলা বই অনুসরণ করতে পারেন। সন্ধি সমাস ও কারকের ক্ষেত্রেও তা করতে পারেন। তবে সাহিত্য অংশ এ বই থেকে বাছাই করে সিলেবাস দেখে পড়তে হবে। কেননা এ বইগুলোতে সাহিত্যের বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। তাই বাছাই করে সাহিত্যিকের নাম, ছদ্দনাম, উপাধি, বিখ্যাত গ্রন্থ, উক্তি ও কিছু কিছু উপন্যাসের বিশেষ চরিত্রের নাম পড়তে হবে। সাহিত্য থেকে ৩/৪ মার্কের প্রশ্ন হয়ে থাকে। সাহিত্য অংশের ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ গাইডও বেশ সহায়ক। মনে রাখবেন এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এক নম্বরও চাকরি না-পাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতএব অত্যন্ত যত্নসহকারে পড়তে হবে।

২. ইংরেজি
বাংলার মতো ইংরেজিতেও ২০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। ইংরেজিতে গ্রামার অংশে Idiom & Phrases, Preposition এবং Correction প্রতিদিন ১৫/২০টি করে পড়তে পারেন। Idiom & Phrase, Preposition-এর জন্য নবম দশম শ্রেণীর ইংরেজি গ্রামার Chowdury & Hossian হতে উপকৃত হতে পারেন। Parts of Speech, Right forms of Verb, Tense, Sentence, Voice, Narration, Correction যেকোনো একটি ভালো গ্রামার বই দেখে চর্চা করতে পারেন। Spelling-এর জন্য নিয়োগ গাইডটিই যথেষ্ট।বিসিএস প্রিলিমিনারির যেকোনো সিরিজের ইংরেজি বই থেকেও সিলেবাস দেখে চর্চা করতে পারেন।

৩. গণিত
গণিতেও ২০ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। গণিত সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া খুব বেশি কঠিন নয়। প্রথমেই পঞ্চম (লসাগু ও গসাগু) ও অষ্টম শ্রেণির বই দু’টির কথা বলতে হয়। ভগ্নাংশ, ঐকিক, শতকরা, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি ও পরিমাপ ইত্যাদির জন্য অষ্টম শ্রেণির গণিত বইটি বেশ কার্যকর। এছাড়া অনুপাতের জন্য সপ্তম শ্রেণির বই দেখতে পারেন। বীজগণিতের উৎপাদক, মান নির্ণয় জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইটি হতে চর্চা করুন। জ্যামিতি থেকে ছোট ছোট সংজ্ঞা ও সূত্র মুখস্ত রাখাটা বেশ জরুরি। এছাড়া আরো বেশি চর্চার জন্য বিসিএস প্রিলিমিনারির যেকোনো সিরিজের গণিত বই থেকে সিলেবাস দেখে চর্চা করবেন। আর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বইতো অবশ্যই ভাতের মতো প্রতিদিন পড়ার রুটিনে থাকবেই।

৪. সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানের জন্য নির্দিষ্ট করে একটি বইয়ের কথা বলা যায় না।প্রথমে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ গাইডটি ভালোভাবে পড়বেন।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে প্রশ্ন আসে। এছাড়া জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি, বিখ্যাত স্থানের নাম, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, গণ-অভূত্থান, সংবিধান, বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন, অর্থনীতি, রাজনীতি, রোগের নাম, পুরস্কার, বিভিন্ন দিবস, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম, আন্তর্জাতিক সংস্থা, রাজধানী ও মুদ্রা (এশিয়া), খেলাধুলা (সাম্প্রতিক বিষয়ে নজর দিন) ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে। গত ৬ মাসের ক্যারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সংগ্রহ করুন এবং বাছাই করে পড়ুন। এছাড়াও বিসিএস প্রিলিমিনারির যেকোনো সিরিজের সাধারণ জ্ঞান বই থেকে সিলেবাস ভিত্তিক ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের সমাধান পড়ুন।

*** (নিয়মিত কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, নলেজ, ওরাকল জ্ঞানপত্র এ ধরনের যেকোনো একটি বই পড়ুন।)***

[প্রিয় পাঠক, এ ব্যাপারে আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে জানান মন্তব্যে। আপনার পরমর্শগুলোও আমরা সংকলন করব এই লেখার শেষে। -সম্পাদক]

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top