বিসিএস (ভাইভা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য দরকার, বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। যারা সব সময় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করেন, তারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে যাওয়ার সুযোগ খুব কম পান। ফলে তাদের জন্য বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের চলমান ঘটনাপ্রবাহ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, খেলাধুলা ও দৈনন্দিন বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি বিষয় জানা হয়ে ওঠে না। অন্য দিকে যারা সব সময় পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর পাতায় চোখ রাখেন, কানে এফএম রেডিও লাগিয়ে খেলার ধারাবিবরণী শোনেন; তারা শিক্ষাজীবনে মধ্যম মানের হয়েও বিসিএস (ভাইভা) পরীক্ষায় অনায়াসে উত্তীর্ণ হতে পারেন।
আপনার মানদণ্ড
সাধারণভাবে বিসিএস (ভাইভা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আপনাকে সাতটি আবশ্যিক মানদণ্ডের অধিকারী হতে হবে। ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা আশা করেন, সাক্ষাৎপ্রার্থীরা ন্যূনতম এসব মানদণ্ড বজায় রেখেই ভাইভা বোর্ডে হাজির হবেন।
১. প্রার্থীর সপ্রতিভ চেহারা, সাবলীল বাচনভঙ্গি ও বিচক্ষণতা।
২. অধ্যয়নকৃত বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা।
৩. নিজ এলাকা বা জন্মস্থান সম্পর্কে ব্যাপক জানাশোনা।
৪. আপনি যে ক্যাডার বা পদে যেতে ইচ্ছুক, ওই ক্যাডার বা পদ সম্পর্কে সর্বোচ্চ ধারণা।
৫. পছন্দের ক্যাডার বা পদে যেতে যে কারণে ইচ্ছুক, তার সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
৬. অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে তা আলোচনার প্রেক্ষিতে তুলে আনা।
৭. সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ঘটনা, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, খেলাধুলা ও শিল্প-সাহিত্যসহ সব কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা।
উপরিউক্ত সাতটি মানদণ্ড বজায় রাখার পাশাপাশি মুদ্রাদোষ ও আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে আপনাকে।
মুদ্রাদোষ
ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীর সহজ হতে না পারার আরেকটি কারণ হলো মুদ্রাদোষ। অনেক পরীক্ষার্থীর নানা রকম মুদ্রাদোষ দেখা যায়। কেউ কথা বলতে গিয়ে তোতলান, কেউ জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটেন, কেউ ঘনঘন ভ্রু কুঁচকান, কেউ আবার কথা বলতে গিয়ে অহেতুক হাত নাড়েন। মুদ্রাদোষের কারণে এসব পরীক্ষার্থী কথা গুছিয়ে বলতে পারেন না। এ থেকে বাঁচার উপায় হলো, ভাইভার আগে আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করুন, কাল্পনিক বোর্ডের সামনে রিহার্সেল দিন। এতে করে মুদ্রাদোষ কমে আসবে এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
আঞ্চলিকতা
অনেকের উচ্চারণে আঞ্চলিকতার দোষ বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মেনে নেয়া যায় না। এ জন্য লক্ষ রাখতে হবে এমন কোনো আঞ্চলিক শব্দ যেন ভাইভা বোর্ডে না বলে ফেলেন, যা সম্পূর্ণ বাক্যের অর্থই পাল্টে ফেলে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, উচ্চারণে অল্পস্বল্প আঞ্চলিকতা দোষনীয় নয়, তবে গুরুতর আঞ্চলিকতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ ক্ষেত্রে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ চর্চা করা যেতে পারে।
সতর্কতা
ভাইভা বোর্ডে করণীয় যেমন আছে, তেমনি বর্জনীয়ও আছে অনেক কিছু। সেজন্য আপনাকে বর্জনীয় বিষয়গুলো জানতে হবে। আপনাকে সতর্ক হতে হবে, যাতে ভাইভা বোর্ডে এগুলো পরিহার করা যায়।
ক. চুইংগাম জাতীয় কিছু মুখে নিয়ে ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করবেন না।
খ. চোখে লাগে, এমন উৎকট রঙের পোশাক পরিধান করবেন না।
গ. হাই তোলা,গা চুলকানো, দাঁত পরিষ্কার করা, কান খোঁচানো, চেয়ারে বসে অযথা পা নাচানো থেকে বিরত থাকবেন।
ঘ. কথার মাঝখানে কথা বলবেন না। আগে শোনায় মন দিন। তারপর উত্তরে যান।
ঙ. অমনোযোগীর মতো অঙ্গভঙ্গি করবেন না।
চ. উত্তেজিত বা রাগান্বিত হবেন না। কোনো অবস্থাতেই বোর্ডের সদস্যদের সাথে তর্কে লিপ্ত হবেন না।