হুমায়ন রশিদ অরুন
১. আপনি বেকার, সংসারে ইনকাম করার মতো আর কেউ নেই, প্রেমিকার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে- এসব নিয়ে দিলেন একটা ইমোশনাল স্ট্যাটাস! প্রচুর লাইক কমেন্ট পড়লো। লাভ কী? আপনি মানুষের করুণা পাবেন, চাকরি নয়! তাই, দয়া করে নিজের দুঃখ বিক্রি করা বন্ধ করে দক্ষতা বাড়ানোতে মন দিন।
২. আপনি গ্রাজুয়েশান করে নিজেকে ‘কুতুব’ ভাবা শুরু করেছেন। ক্যাডার ছাড়া চাকরি করবেন না। ননক্যাডার, ২য় শ্রেনীর চাকরি, স্কুলের শিক্ষকতা এসব “ছোট” চাকরিতে আবেদন করতে আপনার রুচিতে বাধে। একটা বিসিএসের ফাইনাল রেজাল্ট হতে চলে যায় ৩ বছর। চাকরি হয় না। মাঝখান দিয়ে চলে যায় আরও শ’খানেক সার্কুলার যেগুলোতে আপনি অ্যাপ্লাইও করেননি। করলে একটা না একটাতে চাকরি হতোই। বিসিএসের মত চরম আনসার্টেন পরীক্ষার ওপর যে ভরসা করে বসে থাকে, সে বেকার থাকবে না তো কে বেকার থাকবে?
অতএব, সামনে যে সার্কুলার পাবেন অ্যাপ্লাই করুন। পরে ভালো চাকরি পেলে তো ছেড়ে দিতে পারবেনই। মাঝখান দিয়ে বেকার তকমা ঘুচবে আর পে অর্ডারের টাকাটা উঠে যাবে।
৩. আপনার ছোটবেলা থেকে অংক দেখলে জ্বর আসতো, না বুঝে মুখস্ত করতেন। আজকে ব্যাংকার বন্ধুর স্যালারি দেখে ব্যাংকে চাকরির ইচ্ছা জেগেছে।
অথবা, পাঠ্য বইয়ের বাইরে একটা বইও পড়েননি জীবনে। পেপার, ম্যাগাজিন উল্টেও দেখেননি। এখন বড় ভাইদের দেখে বিসিএস ক্যাডার হবার শখ হয়েছে।
পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন, চাকরি হচ্ছে না। গালাগালি করছেন ভাগ্যকে।
এক্ষেত্রে দোষ কার? সব কিছু সবার জন্য না- এটা মাথায় ঢুকান। আপনার দক্ষতা কোথায়? সেই রিলেটেড চাকরি খুজুন। যদি কোনো কিছুতেই আপনার দক্ষতা না থাকে তাহলে চাকরি আপনাকে কেন দিবে?
৪. টাকা ছাড়া চাকরি হয় না, মামা-চাচা ছাড়া চাকরি হয় না- এসব কথা বলে আপনি আপনার দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করছেন। আমি দুটো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির লেকচারার, ব্যাংকের এমটিও, বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি এবং বর্তমানে সহকারী কমিশনার হিসেবে চাকরি করার অভিজ্ঞতা এবং বন্ধু, বড়ভাইদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি মামা, চাচা, টাকা ছাড়াও চাকরি হয়। ভালো চাকরিই হয়।
নিজের দুর্বলতা ভুল এক্সকিউজ দিয়ে না ঢেকে স্বীকার করুন। দুর্বলতা কাটাতে চেষ্টা করুন। নিজেকে গড়ে তুলুন।
৫. তর্কের খাতিরে ধরলাম আপনার অভিযোগ সত্য। একটা প্রতিষ্ঠানে যদি ১০০ জন নেয়া হয় এরমধ্যে কতজনকে টাকা, মামা, চাচার জন্য নেবে? যিনি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে আছেন তারতো প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে। তিনি ভালো করেই জানেন রেফারেন্সে অযোগ্য লোক নিলে তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। ১০০ জনের মধ্যে উনি ১০ বা সর্বোচ্চ ২০ জনকে রেফারেন্সে নিবে। বাকিদের তো যোগ্যতার ভিত্তিতে নিবে? তর্কের খাতিরে ধরলাম ৫০ জনকে রেফারেন্সের জন্য নেয়া হলো। আপনার চাকরি হলো না। তার মানে বাকি যে ৫০ জনকে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেয়া হলো, আপনি তাদের থেকে দুর্বল।
পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে আপনাকে ঐ ৫০% এর মধ্যে আসতে হবে। এটাই সার্ভাইবাল অফ দ্যা ফিটেস্ট। যোগ্যতা না বাড়ালে ঝরে যাবেন।
৬. অনেক কড়া কড়া কিছু কথা বললাম। বেকারদের প্রতি সহানুভূতির কথা সবাই বলে। কিন্তু বেকারদের সহানুভূতি নয়, চাকরি দরকার। এই পোস্ট আপনার ভালো লাগার দরকার নেই। বরং এটি আপনার ভেতর জেদ তৈরি করলেই আমি খুশি।
এই জেদটা জিইয়ে রাখুন।
হ্যাপি জব হান্টিং : ।
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)