কীভাবে কিশোর-কিশোরীদের পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করা যায় – এটি অভিভাবকদের একটি সাধারণ প্রশ্ন। অনেক শিক্ষকও বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। কখনও কখনও, কিশোর-কিশোরীদেরকে তাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার জন্য অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয়। কারণ তাদের বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি শো দেখা বা শিক্ষা ছাড়া ভিন্ন কিছুতে বেশি সময় ব্যয় করে।
কিশোর-কিশোরীদের সাথে ভালো যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে তাদেরকে পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝানো সহজ হতে পারে। তবে যোগাযোগ করতে হবে ইতিবাচকভাবে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে শাস্তি বা জোরাজুরি তাদেরকে অনুৎসাহিত বা বিরক্ত করতে পারে এবং তারা ভুল বুঝতে পারে।
আপনি যদি একজন অভিভাবক হিসেবে সন্তানকে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করতে চান কিন্তু কিশোর সন্তানকে কথা শুনাতে অক্ষম হন সেক্ষেত্রে আপনার জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো। শিক্ষকেরাও তাদের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
টিনএজারদেরকে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করতে ৫ কৌশল
কিশোর-কিশোরীদেরকে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করতে আপনি নিচের সহজ জিনিসগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. সহানুভূতিশীল হোন
কিশোর-কিশোরীদের পড়াশোনায় উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে, আপনাকে অবশ্যই তাদের অনুভূতি ও চিন্তাভাবনা বুঝতে হবে। আপনি নিজেকে তাদের জায়গায় কল্পনা করুন। কিশোররা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল হয়। তাই তাদের সাথে কথা বলুন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন। তারপর আপনার বিষয়টি এমনভাবে ব্যাখ্যা করুন, যা তাদের পড়াশোনাকে গুরুত্ব সহকারে নিতে রাজি করবে।
- কেন আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তান তার কাজ করতে চায় না তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
- বিষয়টি মোকাবেলা করার সর্বোত্তম উপায় হলো তাদের মুখোমুখি হওয়া এবং কোন জিনিস তাদেরকে লেখা-পড়া করতে বাধা দিচ্ছে তা খুঁজে বের করা।
- আপনার সন্তান কোনো একটি বিষয়ের দিকে ঝুঁকতে পারে কিংবা কোনো বিষয়ে ভয় পেতে পারে।
- আপনার সন্তানের ক্লাসে যা শেখানো হচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।
- আপনার কিশোর সন্তানের সাথে কথা বলা আপনাকে সহানুভূতিশীল হতে এবং সমস্যার উত্স সনাক্ত করতে সহায়তা করবে।
[বিশেষ টিপস : আপনার সন্তানকে অভয় দিন, যাতে সে বিষয়টি আপনাকে খুলে বলতে পারে। শুধুই শুনুন, বাধা দেবেন না, অগ্রিম মন্তব্য করবেন না। ]
২. শুরু করুন:
কিশোর-কিশোরীরা সাধারণত দীর্ঘ দিন পরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের বাড়ির কাজ করতে অলস হতে পারে। তাই শুধু আপনার কিশোর-কিশোরীকে পড়াশুনা করতে বললেই যথেষ্ট হবে না।
- তাদের সাথে বসুন এবং কীভাবে এটি করতে হবে তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করুন। তাদের জন্য কঠিন হতে পারে এমন কাজগুলোর তালিকা করুন।
- আপনি একজন গৃহশিক্ষকের খুঁজে দিতে পারেন, যিনি আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে পড়াশুনায় সহায়তা করতে আগ্রহী।
এই পর্বে আপনার সন্তানের জন্য প্রয়োজন, শুধুমাত্র একটি সামান্য সামনে ধাক্কা।
৩. মনে রাখবেন – চিৎকার-চেচামেচি কখনও সাহায্য করে না
আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানকে ছোটখাটো ভুলের জন্য তিরস্কার করা খুব একটা ভালো কাজ করবে না। আপনি যদি সবকিছুর জন্য তাকে বকাবকি করতে থাকেন তবে আপনার সন্তান মানসিকভাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে ফেলবে। প্রতিবাদের চিহ্ন হিসাবে আপনার কথা শোনাও বন্ধ করতে পারে।
- দয়ালু, শান্ত এবং নরম হোন, কিন্তু আপনার চাওয়ার প্রশ্নে দৃঢ় হোন।
- তাকে বোঝান কেন আপনি পড়াশোনা করাকে প্রয়োজন মনে করেন।
- শান্তভাবে আলোচনা করুন কিভাবে এটা তার উপকার করতে পারে। বেহুদা চিৎকার-চেচামেচি, তিরস্কার-বকাবকি এবং দীর্ঘ কথার চেয়ে এটি অনেক বেশি কার্যকর।
[বিশেষ টিপস : নেতিবাচকতার পরিবর্তে তাদের কর্মক্ষমতার ইতিবাচক দিকে ফোকাস করার চেষ্টা করুন। এমনকি যদি আপনার কিশোর সন্তান যদি ভালো স্কোর বা ফলাফল না করে, তবুও তাদের কৃতিত্বগুলি স্মরণ করুন এবং পরের বার ভালো করতে উত্সাহিত করুন।
৪. বেশি প্রত্যাশা করবেন না
প্রথমবার আপনার প্রত্যাশা খুব বেশি রাখবেন না। খুব উচ্চ প্রত্যাশা আপনার কিশোর সন্তানের উন্নতি/বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে এবং তাকে উদ্বিগ্নতা ও চাপে ফেলতে পারে।
- একটি নিয়মিত প্যাটার্ন এবং কঠোর পরিশ্রমের ওপর আরো জোর দিন।
- আপনার সন্তানকে ছোট ও ধারাবাহিক লক্ষ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে শেখান।
- একটি অর্জন করার পর তাকে আরেকটি লক্ষ্য সেট করতে শেখান।
ধারাবাহিক লক্ষ্যগুলির মাধ্যমে কাজ করা আপনার সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদে শিখতে ও আরও অর্জন করতে সহায়তা করবে।
৫. সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের ওপর জোর দিন
এটি নিশ্চিত করুন যে, পড়ালেখার ওপর বেশি জোর দেয়া- সন্তানের সৃজনশীল আগ্রহ এবং অন্যান্য প্রোডাকটিভ ক্রিয়াকলাপকে যেন বাধাগ্রস্ত না করে।
- আপনার কিশোরকে বাইরে যেতে এবং খেলতে উত্সাহিত করুন।
- তাদেরকে বিভিন্ন আগ্রহ ও শখের কাজ করতে সাহায্য করুন।
এটি করা শুধুমাত্র আপনার সন্তানের মনকে সতেজ করবে না বরং দক্ষতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে।
মনে রাখবেন:
- আপনার কিশোরীকে অনুপ্রাণিত করার অর্থ এই নয় যে, আপনি যা চান তাই তাকে করতে বাধ্য করা।
- কিশোর-কিশোরীদের লেখা-পড়া করানোর প্রধান কৌশল হলো- তার সাথে সম্পৃক্ততা। তাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যৌথভাবে সমস্যা সমাধান এবং সমর্থন ও তত্ত্বাবধানের দ্বারা সন্তানকে এগিয়ে নিন।
সর্বোপরি, আপনার কিশোর-কিশোরী সন্তানের সামান্য কৃতিত্বের জন্যও আন্তরিকভাবে প্রশংসা করতে দ্বিধা করবেন না। তাদের আগ্রহকে জাগিয়ে তুলতে মাঝে মাঝে তাদেরকে উৎসাহিত করতে চেষ্টা করুন।
সূত্র : momjunction.com